লাখো ছাত্র-জনতার শহীদি মার্চ থেকে ৫ দফা দাবি ঘোষণা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচার সরকার পতনের ১ মাস পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি মোড় থেকে লাখো ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে পালিত হয় শহীদি মার্চ। পরে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ৫ দাবি ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ৫ দাবি ঘোষণা করেন।
দাবিগুলো হলো-গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করা; গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা; দ্রুত শহীদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দেওয়া; প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
এসময় অন্যতম সমম্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সে রক্ত এবং স্পিরিট বৃথা যেতে দেব না। এখনও অনেক ফ্যাসিস্টের অস্তিত্ব রয়েছে, আমরা ফ্যাসিস্টদের এবং ফ্যাসিবাদী চিন্তা লালন করা মানুষদের বলতে চাই, এ স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট এ বাংলাদেশে হবে না।'
তিনি বলেন, 'আমাদের যে ভাইয়েরা এ স্বাধীনতা আনতে রক্ত দিয়েছেন, আমরা তাদের রক্তের মূল্য দিতে যেকোনো সময় নিজেদের রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।'
এদিকে রাজধানী ঢাকার রাজপথে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতার ৪ ঘন্টার শহীদি মার্চে যান চলাচলে অচলাবস্থা তৈরি হয়।
এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে শহীদি মার্চ পালন করে ছাত্র-জনতা। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
পাশাপাশি শহীদ পরিবার, পেশাজীবী, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ শহীদি মার্চে অংশ নিয়েছেন। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মাগুরা, পাবনা, রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজারো ছাত্র-জনতা শহীদি মার্চ পালন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পতাকা, ফিলিস্তিনের পতাকা, শহীদদের ছবি ও হত্যাকারীদের বিচার দাবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে পদযাত্রা করেন।
আজ বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি মোড় থেকে মিছিলটি নীলক্ষেত অভিমুখে রওনা হয়। এতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
মিছিলটি নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা 'আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; 'শহীদদের স্মরণে ভয় করিনা মরণে'; 'শহীদদের রক্ত, আমাদের শক্তি'- ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রাকিব হাসান বলেন, 'আজকে মিছিলে আসতে বাসা থেকে কেউ বাধা দেয়নি। আগে মা-বাবা আমাকে রাস্তায় বের হতে নিষেধ করতো। স্বাধীনভাবে মিছিলে অংশ নিতে পেরে আমি খুশি, কিন্তু শহীদ ভাইদের শোক কখনো ভুলে যাবার নয়।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসাদ হক বলেন, 'খুনি স্বৈরাচারী শাসনের অবসান এবং শহীদদের স্মরণে আমাদের আজকের কর্মসূচি। শহীদদের রক্ত আগামী দিনের পথচলায় আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।'