বৃষ্টি কমলেও কক্সবাজারের শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি
কক্সবাজারে গতকালকের তুলনায় আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। এখনও জেলা সদর সহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি থাকার তথ্য মিলেছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮ ফিশিং ট্রলার সহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে ট্রলার মালিকেরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জনের মরদেহ সাগর উপকূলে ভেসে এসেছে।
রেকর্ড বৃষ্টিপাত
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১২ টা থেকে শনিবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারে। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টা থেকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে জেলায় ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতার কিছুটা উন্নতি হয়েছে
বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।
শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘির পাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা ও পাহাড়তলী এলাকা থেকেও পানি নেমে গেছে।
তবে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া সহ ৮ টি নিম্নাঞ্চল এখনো পানিবন্দি রয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, "সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া এলাকা নিম্নাঞ্চল। সমুদ্র উপকূলের এসব এলাকার এখনও ১০ হাজার ঘরবাড়ি পানিবন্দি রয়েছে।"
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল-মোটেল জোন থেকে এখন পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে; মুহূর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।"
প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ
এদিকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়াপালং ইউনিয়ন।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বলেন, "বন্যায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন। জালিয়াপালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন এর মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
এই দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছেন। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের অন্তত ৪০ টি গ্রামে পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানিয়েছেন, দুই মাসের ব্যবধানে ৪ দফা বন্যায় তার ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানান, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিতে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত ২০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চারা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থানরত লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে উপজেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সাগরে ৮ ফিশিং ট্রলার সহ ৭০ জেলে নিখোঁজ, ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ থাকার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন জেলে সাঁতার কেটে উপকূলে ফিরেছেন।
৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এসব ট্রলারের আরও অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
এর মধ্যে শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ ও কলাতলী উপকূলে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।
এর মধ্যে দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন, বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল এলাকার নুরুল আমিন (৪০) ও লোহাগাড়া উপজেলার চরমবা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭)। অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মরদেহ ৩ টি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান।