শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সৃষ্ট অস্থিরতা কাটিয়ে ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি গত সপ্তাহ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আবারও আন্দোলন শুরু করেন।
বিজিএমইএ জানিয়েছে, আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদের মোট ৩৯টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারার (নো ওয়ার্ক, নো পে) ভিত্তিতে ২৭টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি আছে ১২টি কারখানায়।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে, এমএএম গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা গ্রুপ, নিউএইজ গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, স্টারলিং স্টাইল, স্টারলিং ক্রিয়েশন, স্টারলিং অ্যাপারেলস, ব্যান্ডো ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, ভিনটেজ, জেনারেশন নেক্সটসহ ২৭টি কারখানা।
স্ববেতনে ছুটি আছে বা কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে, আল মুসলিম অ্যাপারেলস, ট্রাউজার লাইন লিমিটেড, ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড, সাফা সোয়েটার, দ্য রোজ ড্রেসেস, প্রীতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, এফএনএফ ট্রেন্ড ফ্যাশনসহ ১২টি কারখানা।
সূত্রটি জানায়, আশুলিয়া এলাকায় আজ মোট চালু কারখানার সংখ্যা ২৭২টি, আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২৬৭টি কারখানা এবং আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারেনি ৫টি কারখানা।
বিজিএমইএ আরও জানায়, আজ সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় তাদের মোট চালু কারখানার সংখ্যা ৪০৭, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে ৩৯টি, গাজীপুরে খোলা রয়েছে ৮৭৬টি কারখানা, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে ১০টি।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ২০৯টি, ডিএমপি এলাকায় ৩০২টি এবং চট্টগ্রামে ৩৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। যদিও এসব এলাকায় কোনো কারখানা বন্ধ নেই বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। আশুলিয়ার ডিইপিজেড, কাঠগড়াসহ অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজ আশুলিয়া এলাকায় মোট ৫২টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় এবং ৯টিতে সাধারণ ছুটি রয়েছে।
এর আগে গতকাল বিজিএমইএ জানিয়েছিল, গতকাল আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদের মোট ২৭টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারার (নো ওয়ার্ক, নো পে) ভিত্তিতে বন্ধ ছিল ১৩টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে কিংবা স্ববেতনে ছুটি আছে, এমন কারখানা ছিল ১৪টি।
শিল্প সূত্র জানায়, মূলত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের উভয় পাশে যে কারখানাগুলো অবস্থিত, বিশেষ করে নরসিংহপুর ও তার আশেপাশে, এসব কারখানা আজ বন্ধ রয়েছে।
শিল্প পুলিশের ভাষ্যমতে, মূলত গতকাল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা নতুন করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে গতকালই শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। অনেক কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
এদিকে সকালে বকেয়া বেতনসহ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে তৈরি পোশাক কারখানা জেনারেশন নেক্সটের শ্রমিকরা নরসিংহপুর এলাকায় বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, "অনেক কারখানায় যখন টিফিন বিল, নাইট বিল, হাজিরা বোনাস সংক্রান্ত দাবি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছিল, তখন আমাদের কোনো দাবি ছিল না। অন্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের ফ্যাক্টরিতে ঝামেলা করার চেষ্টা করলেও আমরা কাজ করেছি। তারপরও আমাদের মালিক কারখানা বন্ধ করে রেখেছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানাটির একজন নারী শ্রমিক বলেন, "আগস্ট মাসের বেতন আমাদের এখনো পরিশোধ করা হয়নি। যার কারণে আমরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারিনি।"
তিনি বলেন, "আমরা প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার শ্রমিক চরম অসহায় ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। আমরা গরিব বলেই কারখানায় কাজ করতে এসেছি। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আজ বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছি।"
উল্লেখ্য, শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে গত কিছুদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা জেনারেশন নেক্সট। কয়েকদিন আগে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারায় কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাটি বন্ধ রেখেছে।