পলিথিনমুক্ত সুপার শপ: পাটের ব্যাগ ব্যবহারে ইচ্ছুক ক্রেতারা
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনের স্বপ্ন সুপার শপে দিনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসেন সামিরা আক্তার। তিনি আগে থেকেই জানতেন ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। তাই ব্যাগের জন্য বাড়তি খরচ বাঁচাতে তিনি বাসা থেকেই দুটি পাটের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন।
সামিরা আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একটি ব্যাগ ক্যারি করলে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না, এটি অভ্যাসের বিষয়। তবে ভেজা পণ্য যেমন— মাছ, মাংস, শাক এগুলো কাগজের ব্যাগে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পচনশীল পলিথিনের ব্যবহার করা যেতে পারে।"
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার থেকে সুপার শপগুলোতে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিকল্প পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগ।
তবে পূর্বে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হলেও এখন পাট ও কাপড়ের ব্যাগের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি মূল্য।
স্বপ্ন সুপারশপের আরেক ক্রেতা ব্যাগ না নিয়ে আসায় তাকে ১৪ টাকায় একটি পাটের ব্যাগ কিনতে হয়েছে। যদিও তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন, ব্যাগটি তাকে বিনা মূল্যে দেওয়া হবে।
সুপার শপগুলোর ক্রেতা এবং বিক্রেতারা বলছেন, পরিবেশ দূষণ রোধে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। তবে বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা ও স্বল্প খরচ নিশ্চিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্বপ্নের ইস্কাটন আউটলেটের ক্যাশ ম্যানেজার রাহুল সরকার টিবিএসকে বলেন, "আমরা আগে প্লাস্টিকের ব্যাগ ফ্রি দিতাম। যে ব্যাগগুলো কিনতে আমাদের ৭ টাকার মতো লাগতো। কিন্তু পাটের ব্যাগের দাম বেশি। আমাদের এখানে ৬ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন পাটের ব্যাগ রয়েছে।"
"এছাড়া, যদি কেউ বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসেন, তাদেরকে প্রতিটি ব্যাগের জন্য ২ টাকা করে ছাড় দিচ্ছি আমরা— যা একজন কাস্টমার সর্বোচ্চ ৮ বার পর্যন্ত পাবেন," যোগ করেন তিনি।
মগবাজারের মীনা বাজারের অফিসার শোভন হোসাইন রাজু টিবিএসকে বলেন, "আমাদের কোনো আউটলেটেই পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে না। ক্রেতারাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।"
তিনি বলেন, "পাটের ব্যাগগুলো আমরা অর্ধেক দামে কাস্টমারদের দিচ্ছি। যাতে তিনি পরবর্তীতে নিয়ে আসতে পারেন। তবে আমরা যেন কম দামে পাটের ব্যাগগুলো পাই, এক্ষেত্রে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার।"
মীনা বাজারের কাস্টমার তুহিন আহমেদ বলেন, "শুরুর দিকে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হবে। তবে আমাদের ফিউচার জেনারেশনের জন্য এটি উদ্যোগ। এটা আরও আগে হলে ভালো হতো। আমরা খাপ খাইয়ে নেব। আগে যখন গ্রামে বাজার করতাম, তখন ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতাম। সব পণ্য ব্যাগে করেই বহন করতাম।"
তিনি আরও বলেন, "এ কার্যক্রমের শুরুতেই যদি ব্যাগগুলো একটু কম দামে পাওয়া যায়, তাহলে ভালো হতো। সরকার আমাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, কম দামে পাটের ব্যাগ সরবরাহ করলে আরও মানুষ এগিয়ে আসবেন।"
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর আগোরা ও মীনা বাজার সুপারশপে পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প ব্যবহার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় তিনি বলেন, "এই অভিযান শুধুমাত্র পলিথিনের শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে। এখন থেকে কেউ বাজার করতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ আনতে পারবেন না বা বাজার থেকেও নিতে পারবেন না। পরবর্তীতে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকও বন্ধ করা হবে। এর জন্য জনগণ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।"
এদিন সকালে গুলশান-১ এর ইউনিমার্টে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে।"
"নভেম্বর থেকে দেশে পাটের ব্যাগ ও বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পলিথিনের তুলনায় পাট বা কাপড়ের ব্যাগের দাম বেশি হলেও এর ব্যয় ভোক্তাকেই বহন করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
এর আগে, ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও দীর্ঘ ২২ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার পলিথিন নিষিদ্ধের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম ধাপে মঙ্গলবার থেকে সুপারশপে বন্ধ হয়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার।