অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের ডিজিটাল ম্যাপিং প্রকল্প
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অর্থছাড় না করায় বন্ধ হয়ে গেছে বন্দরনগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে হাতে নেয়া জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপ তৈরির কাজ।
২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বন্দরনগরীর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপ তৈরির জন্য ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লুএম) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রকল্পটি হাতে নেন তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। প্রকল্পের কাজ শুরুর আট মাসের মাথায় পরিবর্তন আসে মেয়র পদে। এরপর থেকে গত ১৬ মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে কোনো টাকা দেয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মেয়র বদলের পরপরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে।"
"চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এ চুক্তি করেছিলেন। তার আমলেই ১ কোটি টাকার কাছাকাছি আমাদের দেওয়া হয়েছিলো। ফিল্ড ভেরিফিকেশন সার্ভের কাজ শুরু হলেও, পরবর্তীতে যারা দায়িত্বে এসেছেন তারা ফান্ড দেওয়া বন্ধ করে দেন। এ কারণে প্রকল্পটি নিয়ে আর আগানো যায়নি", যোগ করেন আবু সালেহ খান।
চট্টগ্রাম নগরের জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয় সাত বছর আগে ২০১৫ সালে। আর্ক বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব নিলেও তারা সে কাজ শেষ করতে পারেনি। প্রথম উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০২০ সালে আইডব্লিউএমের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সে সময় জিআইএস ম্যাপ তৈরির এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি টাকা।
আইডব্লিউএমের আইসিটি-জিআইএস ডিভিশনের পরিচালক ড. মোল্লা মোঃ আওলাদ হোসেন জানান, জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ভৌগলিক তথ্য জানার একটি ডিজিটাল সফটওয়্যার। ডিজিটাল এ সিস্টেম ব্যবহার করে প্রকৌশল, পরিকল্পনা, পরিচালনা, পরিবহন, সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ ও ব্যবসায় খাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি সম্ভব। জিআইএস ম্যাপের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জনসংখ্যার গতিশীলতা প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন , "এই ম্যাপটি তৈরী হলে চট্টগ্রাম নগরের সকল ওয়ার্ড, নদী-নালা, খাল-বিল, আবাসন-বস্তি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন, সড়ক, পুকুর-জলাশয় থেকে শুরু করে সব ধরনের অবকাঠামো ও ভৌগলিক পরিবেশের তথ্য নিমিষেই জানা যাবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সহজ হওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতা আসবে গৃহকর আদায়ে।"
২০২০ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি মেয়র পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে ৬ আগস্ট চসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আওয়ামী-লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন। ১৮০ দিন দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হয় তার। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। জানতে চেয়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা এর জবাব দেননি।
তবে সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার আগে এই দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তার আমলেই ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডব্লিউএম) কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। পরের দেড় বছরে তাদের আর কোনো টাকা দেয়া হয়নি।"