খালাস না হওয়া ১৮৮ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস
চট্টগ্রামের আমদানিকারক বেস্ট লজিস্টিকস সার্ভিস বিভিন্ন চালানে ১৬টি কন্টেইনারে প্রায় ৩৫৯ মেট্রিক টন ফিশ ফিড এবং ১২ কন্টেইনারে ২৮৮ মেট্রিক টন এনিমেল ফিড আমদানি করে। অফডক থেকে খালাস না হওয়ায় ইতোমধ্যে পণ্যগুলো পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ২৮ কন্টেইনারে থাকা ৬৪৭ মেট্রিক টন পণ্য মাটির নিচে পুঁতে ধ্বংস করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বেস্ট লজিস্টিকসের মতো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন সময়ে খালাস না হওয়া ১৮৮ কন্টেইনারে থাকা প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ধ্বংস করা হবে। আগামী সপ্তাহের ২৭ অথবা ২৮ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী এ কার্যক্রম। চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ হালিশহরের বে টার্মিনাল প্রকল্প এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হবে এসব পণ্য।
ধ্বংসযোগ্য পণ্যের মধ্যে আরো রয়েছে পেঁয়াজ, ফিশ ফিড, কানাডিয়ান ক্যানুলা, আপেল, মাল্টা, ম্যান্ডারিন, মাছ, বিভিন্ন ধরনের শস্য বীজ এবং লিকুইড ড্রিংকস।
একটি কন্টেইনারে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন পণ্য থাকে। সেই হিসেবে ধ্বংসতালিকায় থাকা ১৮৮টি কন্টেইনারে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার রিমুভাল লিস্ট ( আরএল) এবং সংশ্লিষ্ট পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষা প্রতিবেদনে সরবরাহকারী দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার টিবিএসকে বলেন, খালাস না হওয়া নিলাম অযোগ্য পণ্য ধ্বংস কার্যক্রমের জন্য কেডি শিপিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে এই ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। রোজা শুরুর আগে এই কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ধ্বংস কার্যক্রমে যে টাকা ব্যয় হবে সেগুলো কেডি শিপিংকে কন্টেইনারের সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট বহন করবে।
কেডি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কাস্টমসের ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার সকল প্রস্তুতি রয়েছে। তারিখ নির্ধারণ হলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করবো।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মার্চে বন্দরে পড়ে থাকা প্রায় ১০ বছরের পুরোনা ২৯৮ কন্টেইনার পণ্য মাটিতে পুঁতে ফেলে ধ্বংস করেছিলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই কন্টেইনারে পণ্য ছিলো প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন। যেখানে এক দশক আগের পণ্যও ছিল। সেই ধ্বংস কার্যক্রমের এক বছর পর ফের নিলামঅযোগ্য পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম হাতে নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাস দেয় না। এসব পণ্য নিলামেও তোলা হয় না। সেগুলো সরবরাহকারী দেশে ফেরত পাঠাতে হয়। সেটি না হলে ধ্বংস করা হয়।
এবারের ধ্বংস তালিকায় থাকা এনিমেল ফিড এবং ফিশ ফিড রয়েছে, যেখানে ঘোষণা বহির্ভূত আমদানি নিষিদ্ধ মিট এন্ড বোন মিল (শুকর বর্জ্য) থাকার প্রমাণ পায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য খালাস দেয়নি। এসব পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব নয় বিধায় সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়া নিলামে তোলার পরও যেসব পণ্য বিক্রি হয় না কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় সেগুলোও ধ্বংস করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কন্টেইনার ভর্তি পণ্য চট্টগ্রামে ধ্বংস করা হলেও হ্যাজারডাস তালিকায় থাকা কেমিকেল জাতীয় পণ্য ধ্বংস করা হয় সুনামগঞ্জের লাফার্জ হোলসিম কারখানায়। গত বছরের ডিসেম্বরে বিপজ্জনক পণ্য বিভিন্ন ধরনের সারের ৯ হাজার কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করা হয় সুনামগঞ্জের লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানায়। গত বছরের শেষ দিকে এগুলো সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়া ২০২০ সালে ৪৯ মেট্রিক টন কেমিকেল সহ বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস করা হয় সুনামগঞ্জের সুরমা এলাকায় লাফার্জ হোলসিমের সিমেন্ট কারখানায়।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ৪৯ মেট্রিক টন কেমিকেল সহ বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস করা হয় লাফার্জ হোলসিমের সিমেন্ট কারখানায়। জিওসাইকেল পদ্ধতিতে সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
এদিকে পণ্য ধ্বংসের জন্য কাস্টমসের নিজস্ব জায়গা না থাকার কারণে ধ্বংস কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া এ কার্যক্রম চালাতে আর্থিক সংকট রয়েছে বলেও জানান কাস্টমসের নিলাম শাখার কর্মকর্তারা।
নিলামঅযোগ্য পণ্য ধ্বংসের জন্য কাস্টমসে স্থায়ীভাবে একটা স্থান নির্ধারণ করা উচিত বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।