পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেট করতে এপি মোলার মার্স্ককে চায় ইউরোপীয় বায়াররা
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে এবং জুলাই নাগাদ চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই টার্মিনাল অপারেট করার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় আমদানিকারক ইউরোপীয় বায়ারদের একটি অংশ চায় এপি মোলার মার্স্ক (AP Møller-Maersk)-কে এই টার্মিনাল অপারেটরের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। চিঠি দিয়েছে ইনডিটেক্সও।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম লোডস্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কনগ্লোমারেট গ্রুপটি ডেনিশ সরকারের মাধ্যমে চুক্তিটি অনুসরণ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। সরকারের এই টাার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে মার্স্ক ছাড়াও সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএজিটি) এবং দুবাই ভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডও টার্মিনালটি অপারেট করার কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নিয়মকানুন মেনে ও আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের টার্মিনাল অপারেট করার সুনাম যাদের রয়েছে, তাদেরই কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেট করার সুযোগ পাওয়া উচিত।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান।
তিনি বলেন, এটি পিপিপির মাধ্যমে অপারেট করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। যারা ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারবে, তারা অপারেট করার কাজ পাবে। আর না হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ অপারেট করবে।
এককভাবে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য ক্রয় করে সুইডেনভিত্তিক এইচএন্ডএম গ্রুপ। এইচএন্ডএম গ্রুপের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার মাসাররাত কাদের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে একটি চিঠি লিখেছেন।
ওই চিঠিতে তিনি পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমরা নতুন টার্মিনালে কার্যক্রম শুরু করার সময় পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসনের (ইএসজি) দিকগুলোকে দৃঢ়ভাবে বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করছি। …… বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের এই রূপান্তরের সময় বাংলাদেশের জন্য এখনই সুযোগ অগ্রদূত হওয়ার। মার্স্ক -এর মতো গ্লোবাল লজিস্টিক পার্টনারের সাথে মিলে আমরা আপনাদের উদ্যোগকে সমর্থন দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
এইচএন্ডএম বাংলাদেশের প্রায় ২০০ কারখানা থেকে পোশাক ক্রয় করে, যার পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
আবার ইনডিটেক্স বছরে ১.৩ বিলিয়নের পণ্য ক্রয় করে। একই ইস্যুতে তাদের পক্ষ থেকে সচিবকে দেওয়া চিঠিতে ইএসজি ইস্যু তুলে ধরে বলা হয়, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য মার্স্ক গ্রুপ কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করা প্রস্তাবের প্রতি আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মার্স্ক গ্রুপের সাথে কাজ করার বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের এবং আমরা তাদের এই নতুন টার্মিনালের জন্য আদর্শ অপারেটর হিসাবে বিবেচনা করি। বিশ্বমানের কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি একটি পরিপূর্ণ সাপ্লাই চেইন সমাধানের জন্য তারা যেভাবে নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বের দিকে খেয়াল রাখে সেদিক থেকেই আমাদের এমন ভাবনা।
আমাদের বিশ্বাস, নতুন এই টার্মিনালের অপারেটর হিসাবে তাদের নিয়োগ সকল স্টেকহোল্ডারের জন্য বড় সুযোগ নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এমন প্রতিষ্ঠানের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ পাওয়া উচিত, যাদের আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ টিবিএসকে বলেন, "এপি মোলার মার্স্ক-এর মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেট করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, সন্দেহ নেই। তবে কারো কথায় নয়, সরকারের ক্রাইটেরিয়া যারা পূরণ করবে, তাদেরই টার্মিনালটি অপারেট করার দায়িত্ব পাওয়া উচিত।"
রপ্তানিকারকরাও সবচেয়ে কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টার্মিনাল অপারেট করার পক্ষে। তবে এ নিয়ে যেন কোনো পক্ষ কোনো ধরণের সিন্ডিকেট (চিঠির বিষয়টি ইঙ্গিত করে) করার সুযোগ না পায়, তা খেয়াল রাখা উচিত হবে বলে মত দেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।