১০,০০০ বছর আগে কৃষিকাজের প্রয়োজনেই বিড়ালকে প্রথমবারের মতো পোষ মানায় আদিম মানুষ
আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদীর তীরবর্তী এলাকা ফার্টাইল ক্রিসেন্টে বসবাস করা মানুষেরা প্রথমবারের মতো শিকারি জীবন ছেড়ে কৃষিজীবনে প্রবেশ করে। এ আদিম মানুষেরাই সবার আগে বিড়ালকে পোষ মানিয়েছিল। খবর ফিউচারিটি'র।
বিড়ালকে গৃহপালিত করার মাধ্যমে ওই মানুষেরা তাদের কৃষিকাজে শস্যনষ্টকারী প্রাণীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।
নতুন একটি গবেষণার দাবি, আদিম মানুষের জীবনযাত্রার এ পরিবর্তনই ছিল বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিড়ালকে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত করার অন্যতম প্রভাবক। মানুষ যখন বিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন প্রিয় বিড়ালকেও তারা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল।
বিড়ালজাতীয় প্রাণীর জিন বিশেষজ্ঞ লেসলি এ. লিয়নস ও ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসন-এর কমপ্যারেটিভ মেডিসিনের অধ্যাপক গিলব্রেদ-ম্যাকলর্ন ফার্টাইল ক্রিসেন্ট এলাকার বিড়ালের ডিএনএ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং এশিয়া, ইউরোপ, ও আফ্রিকার বিড়ালের জেনেটিক মার্কারের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ গবেষণাটি করেছেন।
তাদের গবেষণাটি হেরেডিটি নামক একটি জার্নালে এ বছর প্রকাশিত হয়েছে।
লিয়নস জানান, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানুষ ঘোড়া ও অন্যান্য গবাদি পশুকে পোষ মানিয়েছিল। তবে তার গবেষণার বিশ্লেষণ শক্তিশালীভাবে এটাই দাবি করছে যে, আদিম মানুষ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রথমবারের মতো কেবল ফার্টাইল ক্রিসেন্টেই বিড়ালকে বশীভূত করেছিল।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিড়ালের জিনগুলো এর বাচ্চাকাচ্চার মাধ্যমে পরিবাহিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিড়ালগুলোর জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো এখন একে অপরের থেকে ভিন্ন।
লিয়নস বলেন, 'বিড়ালকে এখনো আমরা আধা-গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে অভিহিত করতে পারি। কারণ আমরা যদি তাদেরকে জঙ্গলে ছেড়ে দেই, তাহলেও তারা নিজেরা শিকার ধরে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে এবং নিজেদের মধ্যে প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হবে। এগুলো সম্ভব তাদের প্রকৃতিগত আচরণের কারণে।'
কুকুর ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মতো মানুষ বিড়ালের আচরণে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন এ গবেষক।
লিয়নস দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিড়ালজাতীয় প্রাণীর জিন নিয়ে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য বিড়ালকে বায়োমেডিকেল মডেল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ ও বিড়ালকে আক্রান্ত করে এমন জিনগত রোগ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো।
এর আগে ২০২১ সালের এক গবেষণায় লিয়নস ও তার সহ-গবেষকেরা জানতে পারেন, মানুষের জিনের সঙ্গে অন্য যেকোনো নন-প্রাইমেট প্রাণীর তুলনায় বিড়ালের জিন গঠনের অনেক মিল রয়েছে।