অবশিষ্ট লেখকদেরও ছাঁটাই করল ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’
ডিজিটাল যুগে আর দশটা ছাপা পত্রপত্রিকার মতো টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সাময়িকী 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'ও। বুধবার ওয়াশিংটনভিত্তিক ১৩৫ বছর বয়সি এই সাময়িকী তাদের সর্বশেষ বেতনভুক্ত (স্টাফ) লেখকদেরও ছাঁটাই করেছে।
ওয়াল্ট ডিজনি কোং-এর মালিকানাধীন এই সাময়িকীর ১৯ জন সম্পাদকীয় কর্মীকেও ছাঁটাই করা হয়েছে। গত এপ্রিলে তাদেরকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল।
এখন থেকে 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এর নিবন্ধ লেখার চুক্তি দেয়া হবে ফ্রিল্যান্সারদের অথবা সম্পাদকরাই লেখা দাঁড় করাবেন।
এই দফায় সাময়িকীটির ছোট অডিও বিভাগকেও ছাঁটাই করা হয়েছে।
গত নয় মাসে এই নিয়ে দুবার কর্মী ছাঁটাই করা হলো 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এ। আর ২০১৫ সালে একাধিকবার মালিকানা বদলের পর এই নিয়ে চারবার ছাঁটাই হলো সাময়িকীটিতে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডিজনি সাময়িকীটির সম্পাদনা কর্মকাণ্ড পুনর্গঠিত করার অংশ হিসেবে শীর্ষ ছয় সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।
বিদায়ী কর্মীরা জানিয়েছেন, সাময়িকীটি ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে ছবির চুক্তিও সীমিত করা হয়েছে। আগের চুক্তির বদৌলতে ফটোগ্রাফাররা মাসের পর মাস মাঠপর্যায়ে সময় কাটিয়ে অনেকগুলো আইকনিক ছবি তুলেছেন।
এছাড়া ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই সাময়িকীটির বিখ্যাত উজ্জ্বল হলুদ বর্ডারে ছাপা কপি আগামী বছর থেকে আর যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ স্ট্যান্ডগুলোতে বিক্রি হবে না।
'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এর অনেক ছবি, গ্রাফিক ও নিবন্ধই মাসের পর মাস গবেষণা ও রিপোর্টিংয়ের ফসল।
১৯৮০-র দশকে 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এর জনপ্রিয়তা চূড়া স্পর্শ করে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকীটির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ—আর বিদেশেও বিক্রি হতো লাখ লাখ কপি। ভক্তরা এই সাময়িকীটির কপি সংগ্রহে রাখতেন। সংগ্রহ করতে করতে অনেকের এমন অবস্থা হতো যে চিলেকোঠা ও বেজমেন্টও ভরে যেত।
'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' এখনও আমেরিকার সর্বাধিক পঠিত ম্যাগাজিনগুলোর একটি। যদিও এখন আর আগের মতো কোনো ম্যাগাজিনেরই সুদিন নেই। ২০২২ সালে 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এর গ্রাহকসংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ লাখ।
'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' বাজারে আনে ওয়াশিংটনের ৩৩ জন একাডেমিক, বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী হাতে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। এর উদ্যোক্তাদের দলে ছিলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলও। প্রথমদিকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে সাময়িকীটি বিক্রি হতো। পরে ধীরে ধীরে এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সাময়িকীতে পরিণত হয়। বাড়তে থাকে গ্রাহকসংখ্যা। ১৯৩০-এর দশকে এর গ্রাহকসংখ্যা ১০ লাখের মাইলফলক ছোঁয়।
এরপর একে কে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ন্যাট জিও ওয়াইল্ড টিভি চ্যানেলও আসে।
২০১৫ সালে টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লাভজনক চুক্তি করতে রাজি হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। এরপর থেকেই মান পড়তে থাকে সাময়িকীটির। ২০১৯ সালে ফক্স ও ডিজনির মধ্যে ৭১ বিলিয়ন ডলারের বিশাল চুক্তির মাধ্যমে ডিজনি এর মালিকানায় আসে।