কানাডায় ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ নয়াদিল্লির
কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক বা কানাডায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে 'সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের' পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় উভয় দেশ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার একদিন পরেই নিজেদের নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিল ভারত।
কানাডা জানিয়েছে, তারা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার 'বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের' তদন্ত করছে।
কিন্তু ভারত দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ 'অযৌক্তিক'।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত জুনে শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের জেরে কয়েক মাস ধরে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এবং বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। সেখানে 'ভারতবিরোধী কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ ও সহিংসতার ঝুঁকি বিবেচনায়' ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভারত সরকার প্রায়ই পশ্চিমা দেশগুলোতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের 'খালিস্তান' বা আলাদা একটি শিখরাষ্ট্রের দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ভারতে ১৯৮০'র দশকে খালিস্তান আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং দেশটির শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব রাজ্যে সহিংস বিদ্রোহ শুরু করেন এই আন্দোলনের কর্মীরা।
এ আন্দোলন দমনের জন্য শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ভারতের সরকারি বাহিনীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ঐ বছরের পহেলা জুন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির চত্বরে সেনা প্রবেশ করে, শুরু হয় অপারেশন ব্লু স্টার।
কিন্তু বলপ্রয়োগ করে দমন করা হলেও কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়ের কাছে খালিস্তানের ধারণাটি আজও জনপ্রিয়।
পাঞ্জাবের বাইরে কানাডায় শিখদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং খালিস্তানপন্থী বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সেখানে দেখা গিয়েছে। গত জুনে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত কানাডায় তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে 'আনুষ্ঠানিক অভিযোগ' জানিয়েছে।
বুধবারের বিবৃতিতে নয়াদিল্লি জানায়, সম্প্রতি কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিক এবং 'ভারতবিরোধী প্রচারণার' বিরুদ্ধে সোচ্চার ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে হুমকি দেওয়া হয়েছে। "তাই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এমন অঞ্চল ও এলাকাগুলোতে ভ্রমণ না করতে ভারতীয়দের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।"
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, 'ভারত সরকারের এজেন্টরা' কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রসঙ্গত, ভারত ২০২০ সালে হরদীপ সিংকে সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।
গত ১৮ জুন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একটি শিখ মন্দিরের বাইরে দুই মুখোশ পরা বন্দুকধারী হরদীপ সিং নিজ্জারকে তার গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে।
গত সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যায় কোনো বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি তাঁর দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন- যা অগ্রহণযোগ্য।
ট্রুডোর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত এবং বলে, 'খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী এবং চরমপন্থীদের ওপর থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে' কানাডা, যাদেরকে কিনা সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দিল্লির এমন বিবৃতির পর কানাডাও তাদের নাগরিকদের ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে 'সতর্কতা' দিয়েছে।
কানাডা সরকার নিশ্চিত করেছে যে সোমবার ভারত ভ্রমণ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু সেটা তাদের 'ট্রাভেল হেলথ ইনফরমেশন' বিভাগের পূর্বনির্ধারিত ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে।
বিবিসিকে এক মুখপাত্র বলেন, "ইন্ডিয়া টিএএ (ট্রাভেল অ্যাডভাইস অ্যান্ড অ্যাডভাইসরিজ) পেজে নতুন করে কোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় তথ্য বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।" ভারতজুড়ে 'সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির' কারণে নিজেদের নাগরিকদের 'সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের' পরামর্শ দিয়েছে অটাওয়া।