ব্যথা, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কমাতে পারে স্পর্শ: গবেষণা
বন্ধুকে আলিঙ্গন কিংবা হাত স্পর্শ করা; এমন সব অনুভূতি শরীর ও মনের জন্য বেশ উপকারী।
জার্নাল ন্যাচার হিউম্যান বিহেবিয়ারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। পূর্বে প্রকাশিত ২১২টি স্টাডিকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একইসাথে প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে ৮৫টি ও নবজাতকদের নিয়ে করা ৫২টি গবেষণার পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্পর্শের অনুভূতি শিশুদের মধ্যে প্রথম বিকাশ লাভ করে। চারপাশের পরিবেশ অনুভব করার পাশাপাশি যোগাযোগে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে কোভিড মহামারী চলাকালীন অন্যদের কাছ থেকে স্পর্শের অনুভূতিতে ভাটা পরায় তা অনেকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে।
যাইহোক, যদিও অগণিত গবেষণায় স্পর্শ যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সেটা বলা হয়েছে। তবে খুব কমই গবেষণাতেই বিশাল এই ক্ষেত্রটিকে একসাথে করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রকাশিত গবেষণাটিতে বিশেষজ্ঞরা একটি সহজ বার্তা প্রদানের চেষ্টা করছে। তা হলো, 'স্পর্শ উপকারী'।
ইউনিভার্সিটি হসপিটাল এসেন কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাটির সহ-লেখক ডা. হেলেনা হার্টম্যান বলেছে, "সারাদিনে আরও বেশি সম্মতিমূলক স্পর্শ মানসিক ও শারীরিক অস্বস্তির বিরুদ্ধে উপশম বা সম্ভাব্য বাফার হিসেবে সাহায্য করতে পারে।"
ফলাফলে দেখা যায়, স্পর্শ শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনকি স্পর্শ অন্যকিছুর তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে আরও বড় প্রভাব তৈরি করে।
গবেষকরা বলেন, "আমাদের গবেষণায় দেখা যায় যে, স্পর্শ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ব্যথা, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ কমানোর পাশাপাশি নবজাতকের ওজন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে উপযুক্ত।"
বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানুষকে অন্য বস্তুর মাধ্যমে স্পর্শ করলেও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা পাওয়া যায়। যেমন, রোবট বা কম্বলের স্পর্শ।
হার্টম্যান বলেন, "বিষয়টি বেশ বিস্ময়কর। মানুষের সুস্থতার ইতিবাচক প্রভাবে ভারী কম্বল বা সামাজিক রোবটের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারীর মতো পরিস্থিতিতে; যখন যোগাযোগ হয়ে পরে সীমাবদ্ধ।
গবেষণা দলটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব বস্তুর স্পর্শের চেয়ে মানুষের স্পর্শে বেশি হতে পারে বলে মনে করছে। কারণ এতে একজনের ত্বক থেকে অন্যজনের ত্বকে সরাসরি যোগাযোগ হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, স্পর্শ স্বাস্থ্যকর ও অসুস্থ উভয় ব্যক্তির জন্যই উপকারী। যদিও স্পর্শের ধরন ও সময়কাল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে ফ্রিকোয়েন্সি যত বেশি হবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ততটাই ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাবে।
অন্যদিকে মাথায় স্পর্শ করা শরীরের অন্যান্য অংশ স্পর্শ করার চেয়ে স্বাস্থ্যগত দিন থেকে বেশি ইতিবাচক বলে পাওয়া গেছে।
তবে দলটি সতর্ক করেছে যে, গবেষণার কিছু ফলাফল ভুলও হতে পারে। একইসাথে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি জুড়ে ফলাফল একইরকম থাকবে কি-না, তা স্পষ্ট নয়।
রয়্যাল হলওয়ে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মারিয়ানা ভন মোহর গবেষণাটির সাথে যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, "যদি ভবিষ্যতের রোবটগুলি আরও সঠিকভাবে মানুষের ত্বকের গঠন এবং উষ্ণতার প্রতিলিপি করতে পারে তবে তারা মানুষের স্পর্শের মতোই মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে সক্ষম হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্যাটেরিনা ফোটোপোলু বলেছেন, "গবেষণাটি স্বাস্থ্যের উপর স্পর্শের উপকারিতা সম্পর্কে বেশ সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।"
তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, কাজটি অনেক বেশি নির্দিষ্টভাবে ফলাফল দিতে পারেনি। যেমন, ঠিক কোন ধরণের স্পর্শ কোন নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে সম্পর্কিত।
ফোটোপোলু মনে করেন, গবেষণাটি একটি রোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিত্সার পাশাপাশি কীভাবে স্পর্শকে ব্যবহার করা যেতে পারে তার দ্বার উন্মোচিত করতে পারে।
তিনি বলেন, "এটি আমাদের ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্য যে, আমরা গত কয়েক শতাব্দীতে স্পর্শ বা অন্যান্য সোমাটিক থেরাপির থেকে অন্য বিষয়গুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছি। সেক্ষেত্রে এই গবেষণাটি স্পর্শ প্রভাবের ওপর আরও যত্নশীল গবেষণার মাধ্যমে ভারসাম্য তৈরিতে আমাদের প্রয়োজনীয় জোর ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান