এশিয়ার তাপপ্রবাহে পোষা প্রাণী ও রাস্তার কুকুরগুলোও ভুগছে
কলকাতার পশুচিকিৎসক পার্থ দাস। গত সপ্তাহে তার ক্লিনিকে বহু মানুষ তাদের প্রিয় পোষা প্রাণীটির চিকিৎসা করাতে এনেছিলেন। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব প্রাণী নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি, জ্ঞান হারানোসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়েছিল।
৫৭ বছর বয়সী এ চিকিৎসক এএফপিকে বলেন, ''অনেক পোষা প্রাণীই টানা তিন বা চার দিন ধরে হাসপাতালে আছে। এগুলো স্বাভাবিক হতেও বেশ সময় নিচ্ছে।''
তিনি বলেন, ''আমরা একদিনে একাধিক হিট স্ট্রোকের কেস পাচ্ছি। এটা নজিরবিহীন।''
কলকাতার আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গরমে সেখানকার জনজীবন নাকাল। গত মাসে (এপ্রিল) শহরটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৫৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যেকোনো বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রচণ্ড গরমের কারণে দুপুরের দিকে শহরটির রাস্তাঘাটও প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। শহরটির প্রায় ১৫ মিলিয়ন বাসিন্দা এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বের হচ্ছেন না।
এ গরমে কুকুর ও বিড়ালগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পার্থ দাস বলেন, গরমের কারণে শহরজুড়ে পোষা প্রাণীদের মধ্যে পানিশূন্যতাজনিত অসুখ বাড়ছে।
শ্রীপর্ণা বোস নামে এক শিক্ষক জানান, তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর তার পোষা বিড়াল দুটি বিষণ্ন হয়ে পড়েছিল। এগুলো এমন আচরণ আগে কখনোই করেনি।
তিনি বলেন, 'ওরা খাবার খাচ্ছিল না, ঘরের অন্ধকার ও ঠাণ্ডা কোণে গিয়ে লুকিয়ে পড়ত এবং বাইরে আসত না।'
পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমিত শহরের রাস্তার প্রায় ৭০ হাজার কুকুরের অবস্থা আরও খারাপ। কারণ এদের কোনো মালিক নেই। তাই অসুস্থ হয়ে পড়লেও এদের হাসপাতালে আনা বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ কম বললেই চলে।
এসব কুকুরের কোনোটিকে পার্কিং করে রাখা গাড়ির নিচের ছায়ায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। কিছু কুকুরকে আবার কেউ কেউ সহানুভূতি দেখিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন।
স্থানীয় পশুকল্যাণ বিষয়ক দাতব্য সংস্থা হিউম্যানিমাল ফাউন্ডেশনের গুরশান কোহলি বলেন, ''রাস্তাগুলো খুব গরম। তাই কুকুরগুলোর রাস্তায় দাঁড়াতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।''
তিনি বলেন, ''বেশ কিছু কুকুর মারা গেছে, যদিও তিনি ও তার সহকর্মীরা চিকিৎসার জন্য কুকুরগুলো ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।''
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় অংশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, যা আগের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গরমের কারণে এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ দীর্ঘ, ঘন ঘন ও আরও তীব্র হচ্ছে।
তাপপ্রবাহের কারণে মহাদেশজুড়ে প্রাণীদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কাছে একটি পশু আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনাকারী রেসকিউ পিএডব্লিউএস এর হেনা পেকো এএফপিকে বলেন, ''তারা (প্রাণী) কম খাচ্ছে এবং নড়াচড়া করতে চাইছে না।''
গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
হেনা পেকো বলেন, ''এই আবহাওয়ার কারণে আমরা অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি।''
তিনি আরও বলেন, ''গত বছরও পরিস্থিতি খারাপ ছিল। এ বছর আরও বেশি খারাপ।''
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক