জন্মহার বাড়াতে ডেটিং অ্যাপ চালু হচ্ছে টোকিওতে; আয় সনদ ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাপানের সরকার বলেছিল, দেশটির রেকর্ড সর্বনিম্ন জন্মহারের সমস্যা মোকাবিলার জন্য 'নজিরবিহীন পদক্ষেপ' নিতে হবে।
এই বার্তা সম্ভবত বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে দেশটির রাজধানী টোকিওর সরকার।
রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য একটি ডেটিং অ্যাপ বানাতে এবং বিয়ের প্রচারণা প্রকল্পের জন্য ১.২৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার। এবারের গ্রীষ্মেই চালু হওয়ার কথা রয়েছে অ্যাপটির।
ব্যবহারকারীরা যাতে সর্বশেষ লক্ষ্য হিসেবে বিয়ে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, সেভাবেই সাজানো হয়েছে এই অ্যাপের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। অন্যান্য ডেটিং অ্যাপে যেসব সমস্যায় পড়তে হয়, সেগুলো যেন না থাকে সেজন্যই এই অ্যাপ আঞ্ছে টোকিও।
জাপানের জাতীয় দৈনিক দ্য আসাহি শিম্বুন জানিয়েছে, অ্যাপটিতে শুধু ফটো আইডি নয়, তার সঙ্গে আয়ের সনদ এবং নিজের সম্পর্কের অবস্থা (রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস) নিশ্চিত করে একটি অফিশিয়াল ডকুমেন্টও দিতে হয় ব্যবহারকারীকে।
আসাহি শিম্বুনের খবরে বলা হয়েছে, অ্যাপে ব্যবহারকারীর উচ্চতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাসহ ১৫ ক্যাটাগরির ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। এই সব তথ্যই যোগ্য পাত্র/পাত্রী দেখতে পাবেন।
এসব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ব্যবহারকারীরা অ্যাপের অপারেটরের সঙ্গে বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা বিয়ের জন্য সঙ্গী খুঁজছেন, স্রেফ সময় কাটানোর জন্য নয়।
টোকিওর একজন কর্মকর্তা দ্য আসাহি শিম্বুনকে বলেন, 'বিয়ে করতে আগ্রহী কিন্তু সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছেন না, এমন মানুষ থাকলে আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই।'
পাত্র-পাত্রীর সন্ধানের জন্য স্থানীয় সরকারের এভাবে অ্যাপ বানানোর ঘটনা বিরল। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে সরকারিভাবে বানানো অ্যাপ মানুষকে মূলধারার অ্যাপগুলোর অপব্যবহার বন্ধ করতে উৎসাহিত করবে।
২০২১ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, জাপানে ব্যবহৃত ৬০ শতাংশ ডেটিং অ্যাপেই বৈবাহিক অবস্থা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেন ব্যবহারকারীরা। সেইসঙ্গে ভুয়া প্রোফাইলসহ অন্যান্য সমস্যাও আছে।
তবে দেশটিতে ডেটিং অ্যাপের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলদের সবচেয়ে বেশি পরিচয় হয় ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। এর মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে দেখা হওয়া ২৫ শতাংশ যুগল এক বছরের মধ্যে বিয়ে করেন।
এসব বিষয় বিবেচনায় জাপান যখন অত্যন্ত নিম্ন জন্ম ও বিয়ের হার নিয়ে ভুগছে, সেই সময়ে আনা হচ্ছে এই সরকারি অ্যাপ।
জাপানে টোকিওর ৫০ বছর বয়সি বাসিন্দাদের মধ্যেই অবিবাহিতের হার সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর এ বয়সি ৩২ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী অবিবাহিত।
তবে টোকিওর বিয়ে করতে ইচ্ছুক ৬৭.৪ শতাংশ বাসিন্দা সক্রিয়ভাবে সঙ্গী খুঁজছেন না বলে উঠে এসেছে স্থানীয় সরকারের ২০২১ সালের এক জরিপে।
এদিকে বুধবার জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে দেশটির জন্মহার ৫.৩ শতাংশ কমে গেছে। ১৮৯৯ সালে পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করার পর থেকে আর কখনও জাপানের জন্মহার এভাবে কমেনি। এছাড়া ২০২৩ সালের তুলনায় বিয়ের হারও কমেছে ৬ শতাংশ।
টোকিওতে এ পরিস্থিতি আরও সঙিন। ২০২৩ সালে রাজধানীর প্রজনন হার—একজন নারী তার আয়ুষ্কালে গড়ে যে কটি সন্তান জন্ম দেন—ছিল ০.৯৯। অর্থাৎ শহরটির নারীদের প্রত্যাশিত সন্তান জন্মদানের হার ১-এরও নিচে নেমে গেছে।
জাপান সরকার ২০২৪ সালের বাজেটে শিশুযত্ন ও পিতৃ/মাতৃসেবার জন্য আলাদা করে ৩৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে।
টোকিও সরকারের এই ডেটিং অ্যাপ আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। জনসংখ্যা হ্রাসকে জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও মারাত্মক হুমকি বলে আখ্যা দেওয়া মাস্ক এ অ্যাপের সমর্থনে টুইটও করেছেন। টুইট বার্তায় মাস্ক লিখেছেন, জাপান সরকার জনসংখ্যা কমে যাওয়ার সমস্যাটিকে স্বীকৃতি দেওয়ায় তিনি 'আনন্দিত'।
অ্যাপটি চালুর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় টেসলা সিইও বলেছেন, 'বিপ্লবী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে জাপান (এবং আরও অনেক দেশ) মুছে যাবে!