সুপ্রিমকোর্টের দেয়া ট্রাম্পের দায়মুক্তির রায়ে কী আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নেওয়া কিছু পদক্ষেপের জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১ জুলাই) মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট-এর রায়ে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সরকারি কাজের অংশ হিসেবে যা করেছেন তার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। তবে তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য তাকে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এ রুল ঘোষণা করেন। আদালতের অন্য ছয় বিচারপতি এ রুলে একমত পোষণ করলেও অন্য তিন বিচারপতি এতে দ্বিমত জানান।
এ রায়ের উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হলো:
মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাদের সরকারী কর্মকান্ডের জন্য এখন থেকে দায়মুক্তি পাবেন
সুপ্রিম কোর্ট-এর রায় অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্টদের অফিসে থাকাকালীন সরকারি ক্ষমতার নেওয়া সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপের জন্য বিচারের মুখোমুখি না করা গেলেও, ব্যক্তিগত কাজের জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে।
ট্রাম্পের বিচারকার্যে উপস্থিত বিচারক ও ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ তানিয়া চুটকানকে এখন নির্ধারণ করতে হবে, অভিযোগে উদ্ধৃত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো সরকারি সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হবে কিনা— যার জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট একটি সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন যাতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছ হারের পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফলাফল পাল্টানোর চেষ্টা করার যে অভিযোগ এসেছিল তাতে তাকে আর অভিযুক্ত করা যাবে না।
আদালত থেকে বিস্তৃতভাবে প্রেসিডেন্ট-এর কর্মকান্ডকে সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টরা প্রতিটি সিদ্ধান্তের জন্য বিচারের ভয় পেলে তাদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারবেন না। আদালত বলেছেন, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) তার সরকারী দায়িত্বে থাকাকালীন কিছু কর্মকান্ড থেকে দায়মুক্তি পাচ্ছেন।
তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি উক্ত রায়ে দ্বিমত পোষণ করে যুক্তি দিয়েছিলেন, এটি একজন প্রেসিডেন্টকে সরকারী দায়িত্বের আড়ালে আইন ভঙ্গ করার সুযোগ করে দেয়।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সম্ভবত ট্রাম্পের আর বিচার হবে না
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে নভেম্বরের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
নির্বাচনে ট্রাম্প প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন— এমন অভিযোগ এনে বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা মামলার বেশিরভাগই এই রায়ের পর খারিজ হয়ে যেতে পারে।
এর মধ্যে ভোটার জালিয়াতির তদন্তের বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে ট্রাম্পের আলোচনা করার বিষয়টি রয়েছে। এ ব্যাপারে আদালত রায় দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের আলোচনা সরকারী পদক্ষেপের অংশ হওয়ায় তার বিচার করা যাবে না।
ট্রাম্প ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতির মিথ্যা দাবি করেছিলেন।
নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে প্রসিকিউশন
সুপ্রিমকোর্টের রায় প্রসিকিউটরদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে কারণ এখন তাদের অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো তার সরকারী দায়িত্বের অংশ ছিল না। শুনানি এবং আদালতের সিদ্ধান্ত মিলিয়ে এর পেছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের অর্থ হল, প্রসিকিউটররা ট্রাম্পের সরকারি কর্মকান্ড থেকে প্রমাণ ব্যবহার করে তাকে অন্যান্য অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করতে পারবেন না।
'গনতন্ত্রের জন্য এটি আশঙ্কার কারণ হতে পারে'
তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি উক্ত রায়ে দ্বিমত পোষণ করে যুক্তি দিয়েছিলেন, এই রায় একজন প্রেসিডেন্টকে নিজেদের সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করে আইন ভঙ্গ করার সুযোগ করে দেবে।
লিখিত বক্তব্যে বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র বলেছেন, রায়ের ফলে একজন প্রেসিডেন্ট অভ্যুত্থান সংগঠিত করা, ঘুষ নেওয়া বা প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মতো গুরুতর অপরাধের জন্য বিচার থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
'গনতন্ত্রের জন্য এটি আশঙ্কার কারণ হতে পারে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে আগে কখনও কোনো প্রেসিডেন্টের মনে হয়নি যে সরকারী দায়িত্বের আড়ালে আইন ভঙ্গ করার সুযোগ আছে।'
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়