যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতির দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি। গাজার বন্দিশিবিরে আরও ছয়জন বন্দির মৃতদেহ পাওয়ার পর দেশটির প্রধান শ্রমিক ইউনিয়নও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের মতে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জেরুজালেম, তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে আন্দোলন করছে।
বিক্ষোভকারীরা "এখনই! এখনই!" স্লোগান দিতে দিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের সামনে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার এবং বাকি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। নেতানিয়াহুর কাছে তাদের দাবি, তিনি যেন বাকি ১০১ জন বন্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেন।
তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ধারণা, এদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বন্দি সম্ভবত মারা গেছেন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। প্রায় ১১ মাস আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে এটি। এদিকে শ্রমিক নেতারা সোমবার এক দিনের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
অনেক ইসরায়েলি তেল আবিবে রাস্তা অবরোধ করেন এবং পশ্চিম জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বাইরেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, তেল আবিবের প্রধান মহাসড়ক বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে পূর্ণ, যারা নিহত বন্দিদের ছবি সংবলিত পতাকা ধরে আছেন। ইসরায়েলি টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, রাস্তায় অবরোধ তৈরি করা বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ জলকামান ব্যবহার করছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে, গাজার বন্দিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী 'হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম' জানিয়েছে, ছয়জন বন্দির মৃত্যু সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যর্থতার ফলাফল, যিনি সংঘর্ষ বন্ধ করতে এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে কোনো চুক্তি করতে পারেননি।
ফোরামটি বলেছে, 'হামাসের বন্দিদশায় প্রায় ১১ মাস অত্যাচার, নির্যাতন এবং অনাহারে বেঁচে থাকার পরও গত কয়েক দিনে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।'
ইসরায়েলের হারেতজ পত্রিকার কলামিস্ট গিদিওন লেভি আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহু তার সরকারের ডানপন্থি দলগুলোকে সমর্থন করছেন, যারা হামাসের সাথে কোনো ধরনের আপস করতে চায় না।
তিনি বলেন, "তারা [এই দলগুলো] বন্দিদের নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না।"
অবশ্য নেতানিয়াহু বলছেন ভিন্ন কথা। এক ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেছেন, গত ডিসেম্বর থেকেই হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু হামাস রাজি হচ্ছে না।
তিনি বলেছেন, গত ১৬ আগস্টও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু হামাস এতে রাজি হয়নি।
সিনিয়র হামাস কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় ইসরায়েলই এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী। সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, "নেতানিয়াহু ইসরায়েলি বন্দিদের হত্যার জন্য দায়ী। ইসরায়েলিদের উচিত নেতানিয়াহু ও চুক্তির মধ্যে থেকে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া।"
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর হামাস ও অন্যান্য যোদ্ধারা ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দি করে, যার পরপরই গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়।
এরপর থেকে ইসরায়েলের আক্রমণে অন্তত ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষরা আশ্রয় ও খাদ্য সংকটে অমানবিক দিনযাপন করছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন