বন্যা মোকাবিলায় ব্যর্থ, সরকারি কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে উ. কোরিয়া, দাবি দ. কোরিয়ার
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় সম্ভবত একাধিক কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার মানুষের ঘর ধ্বংস হয়ে যায়, নিহত হয় ১ হাজার ৫০০-র বেশি মানুষ।
ইয়োনহাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বলেছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন শাসক দলের পলিটব্যুরোর জরুরি সভায় বন্যায় এসব ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই ওই কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার লক্ষণ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার।
গত জুলাইয়ে তুমুল বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় জাগাং ও উত্তর পিয়ংগান। এতে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয় হাজারো মানুষ।
সরকারি কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবরটির সত্যতা আলাদাভাবে যাচাই করা হয়নি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থা শুধু বলেছে, তারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার 'চিহ্ন শনাক্ত' করেছে। বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদমাধ্যম টিভি চোসান-এ নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক একজন উত্তর কোরিয়ান কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, 'প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন্য নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।'
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধমতি বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে শাসক দলের জাগাং প্রভিন্সিয়াল কমিটির প্রধান সেক্রেটারি কাং পং-হুনও থাকতে পারেন।
জুলাইয়ে পলিটব্যুরোর সভায় কাং ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রি থায়ে-সপসহ অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় বলে জানিয়েছিল দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি।
কিম জং উনকে উত্তর পিয়ংগান প্রদেশের সিনুইজু ও উইজু কাইন্টিতে বন্যার পানিতে নেমে ত্রাণ দিতে গেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, তিনি সামরিক হেলিকপ্টার দিয়ে আটকা পড়া ৫ হাজার মানুষকে উদ্ধারের কার্যক্রম তদারকি করেছেন।
দুর্বল অবকাঠামো ও আন্তর্জাতিক সহায়তা না নেওয়ায় উত্তর কোরিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হয় ব্যাপক।
বিশেষ করে বন্যায় উত্তর কোরিয়ার অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। ২০১২ সালে অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৬৯ জন মারা গিয়েছিল। আর ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে উত্তর কোরিয়ার কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিল দফায় দফায় বন্যা ও খরা।
২০১৬ সালে টাইফুনের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় উত্তর কোরিয়ার প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়, মানবিক সহায়তার প্রয়োজন পড়ে ৬ লাখ মানুষের।