ব্রিকস-এ যোগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করল তুরস্ক
উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর ব্রিকস ব্লকে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে তুরস্ক।
বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা মিত্রদের বাইরে নতুন সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে তুরস্ক ব্রিকস ব্লকে যোগদান করতে চায় বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তুর্কি কর্মকর্তার মতে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রশাসন মনে করে– বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো থেকে সরে যাচ্ছে।
এই কারণে ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে অবস্থিত তুরস্ক কিছু মাস আগে ব্রিকস গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এর মাধ্যমে তারা বহুমুখী বিশ্বে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, যদিও দেশটি ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি না হওয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে ন্যাটোর অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিরোধের ফলেও তুরস্ক ব্রিকসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে ঐ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, "পূর্ব এবং পশ্চিমের সঙ্গে একসঙ্গে সম্পর্ক ভালো করলে তুরস্ক একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক দেশ হতে পারবে। অন্য কোনো পদ্ধতি তুরস্কের জন্য ভালো বয়ে আনবে না, বরং সেটি ক্ষতিকর হবে।"
ব্রিকস (বিআরআইসিএস) গ্রুপ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত, যেটি এ বছর ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া এবং মিশরকে নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সৌদি আরবকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি। ব্রিকসের আরও সম্প্রসারণ নিয়ে অক্টোবরের শেষে রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এক সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র আজারবাইজানও ব্রিকস-এ যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ব্রিকস নিজেকে পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে। নতুন সদস্যরা এর উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন এবং রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিস্তারের সুযোগ পেতে পারে।
এরদোয়ানের দল ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে তুরস্কের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প ও শক্তিশালী অর্থনীতির পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
এরদোয়ান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে বলেন। ন্যাটোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাশিয়া ও চীনের প্রতিষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় যোগ দেওয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
তুরস্ক ২০০৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
তুরস্কের মতে, ব্রিকসে যোগ দেওয়া রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নত করতে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এশিয়ার মধ্যে একটি বাণিজ্য সংযোগ স্থাপন করতে সহায়ক হবে।
দেশটি রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বাইরে গ্যাস রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু হতে চায়। একইসঙ্গে তুরস্ক ইইউতে যোগদানের প্রচেষ্টাও পুনরুজ্জীবিত করতে চাচ্ছে, যা তাদের জন্য একটি কৌশলগত লক্ষ্য বলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জুনে ব্রিকস পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর জানিয়েছিলেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়