বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত
ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শহরতলিতে এ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এই আক্রমণের ফলে লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠল। ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।
এর আগে ইসরায়েল জানিয়েছিল, হামলায় আকিলসহ হিজবুল্লাহর আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের পর হিজবুল্লাহও আকিলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে লেবানিজ কর্মকর্তারা জানান, লেবাননের দক্ষিণ শহরতলির ঘনবসতিপূর্ণ দাহিয়াহ এলাকায় চালানো এ হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। এ এলাকা ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি।
হামলার ঘটনাস্থলে জরুরি পরিষেবা টিমগুলো আহতদের উদ্ধারে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের সন্ধানে অভিযান চালায়। হামলায় কয়েকটি ভবন ধসে পড়ার পাশাপাশি আরও অনেকগুলো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত পেজার ও ওয়াকি-টকির বিস্ফোরণ ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই এই হামলা চালানো হলো।
এসব বিস্ফোরণে কয়েক মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এসব বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলেই সবার ধারণা।
জুলাইয়ে হিজবুল্লাহর সামরিক প্রধান ফুয়াদ শুকুরকে হত্যার পর এই বিমান হামলাই বৈরুতে প্রথম আঘাত।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, হিজবুল্লাহর এলিট রাদওয়ান বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
হাগারি বলেন, হিজবুল্লাহর নেতারা দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়াহ অঞ্চলের একটি আবাসিক ভবনের নিচে ভূগর্ভে একত্র হয়েছিলেন।
আইডিএফ মুখপাত্র আরও বলেন, হিজবুল্লাহর নিহত কমান্ডাররা 'কনকার দ্য গ্যালিলি' নামক একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছিলেন। ওই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে 'বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও অপহরণ' করা।
২০১৮ সালে প্রথম এই পরিকল্পনার কথা জানায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ওই সময় আইএইএফ জানায়, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য ব্যবহার হয়ে আসা হিজবুল্লাহর খোঁড়া টানেলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে তারা।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা আকিল ওরফে তাহসিনকে খুঁজছে। তার খোঁজ পাওয়ার মতো তথ্য দিলে পুরস্কারও ঘোষণা করে ওয়াশিংটন।
হিজবুল্লাহর উচ্চপদস্থ কমান্ডার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় ছিলেন আকিল। হিজবুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলসহ আরও কিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে।
১৯৮০-র দশকে আকিল বৈরুতে মার্কিন দূতাবাস ও সামরিক ব্যারাকে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় কয়েকশো মানুষের প্রাণহানি হয়।
হিজবুল্লাহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইব্রাহিম আকিলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাকে 'অন্যতম মহান জিহাদি নেতা' বলে উল্লেখ করেছে।
১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের মোকাবিলার জন্য ইরানের সহায়তায় হিজবুল্লাহ গঠিত হয়েছিল। ওই সময় লেবাননের গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ লেবানন দখল করে নিয়েছিল ইসরায়েল।