খাবার কুড়ানো নারীদের হত্যার পর শূকরকে খাওয়ানোর অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিক্ষোভ
দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে গুলি করে মরদেহ শূকরকে খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে একজন শ্বেতাঙ্গ কৃষক ও তার দুই কর্মীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ঘটনা নিয়ে নতুন করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি।
অভিযোগ উঠেছে, গত আগস্টে মারিয়া ম্যাকগাতো (৪৫) ও লুসিয়া এনডলোভু (৩৪) দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর লিম্পোপো প্রদেশের পোলকওয়েনের কাছে একটি খামারে খাবারের খোঁজে গেলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য তাদের মরদেহ খাওয়ানো হয় শূকরকে।
হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগে খামারমালিক জাকারিয়া জোহানেস অলিভিয়ের (৬০) এবং তার দুই কর্মচারী অ্যাড্রিয়ান ডি ওয়েট (১৯) ও উইলিয়াম মুসোরার (৫০) জামিনের শুনানি শুরু করেছে একটি আদালত।
সন্দেহভাজনদের জামিন নামঞ্জুরের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে পোলকওয়ানে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের শুনানি 'জনস্বার্থে' সংবাদমাধ্যম দ্বারা ভিডিও করার অনুমতি দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট এনতিলানে ফেলেং।
পরে তিনি অধিকতর তদন্তের জন্য ৬ নভেম্বর পর্যন্ত জামিনের শুনানি স্থগিত করেন। ততদিন সন্দেহভাজনরা পুলিশ হেফাজতেই থাকবেন।
ম্যাকগাতোর ভাই ওয়াল্টার ম্যাথোল বিবিসিকে জানান, এ ঘটনাটি দক্ষিণ আফ্রিকার কালো ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
৩০ বছর আগে বর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসান হলেও দেশটির বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনও ব্যাপক আকারে বর্ণবাদ রয়ে গেছে।
সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখার এবং এনডলোভুর স্বামী মাবুথো এনকিউবেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে। দুই নারীর সঙ্গে এনকিউবেও খামারে গিয়েছিলেন।
১৭ আগস্টের ওই ঘটনায় গুলি খেলেও এনকিউবে বেঁচে যান। হামাগুড়ি দিয়ে পালিয়ে একজন ডাক্তারের কাছে সাহায্য চান তিনি।
এনকিউবে পরে ঘটনাটি পুলিশকে জানান। পুলিশ কর্মকর্তারা শূকরের খোঁয়াড়ে তার স্ত্রী ও ম্যাকগাতোর গলিত মরদেহ খুঁজে পান।
ম্যাথোল জানান, তিনিও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন। শূকরের খোঁয়াড়ে এক ভয়ানক দৃশ্য দেখেন তিনি—তার বোনের মরদেহের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছে জন্তুগুলো।
সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বা অল্প কদিনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে—এমন পণ্যের চালান থেকে ভোজ্য খাবারের সন্ধানে ভুক্তভোগীরা ওই খামারে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এসব খাবার মাঝেমধ্যে খামারে রেখে শূকরদের দেওয়া হতো।
গ্রামের ওই খামারটিতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায়ই ফেলে দেওয়া খাবার কুড়িয়ে আনতে যান। ম্যাকগাতোসহ আরও অনেকেই অতীতে সেখানে খাবার কুড়াতে গেছেন।
ম্যাকগাতো চার ছেলের জননী ছিলেন। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।
এদিকে বিরোধীদল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ) বলছে, খামারটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার কমিশন এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বর্ণবাদবিরোধী আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার খামারিদের—যাদের অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ—দলগুলো দাবি করছে, এমনিতেই দেশটিতে অপরাধের হার বেশি। তার মধ্যে কৃষকরা আরও বেশি আক্রমণের শিকার হয়। যদিও তাদের এ দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই।
সম্প্রতি আরও দুটি ঘটনায় জাতিগত উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ এমপুমালাঙ্গায় আগস্টে একটি খামারে দুজন ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে একজন কৃষক ও তার নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হত্যা করে মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভেড়া চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আর সাম্প্রতিক ঘটনাটি একজন ৭০ বছর বয়সি শ্বেতাঙ্গ কৃষকের খামারে ঘটেছে। খামার থেকে কমলা চুরি করার জন্য একটি ছয় বছর বয়সি ছেলের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে তার দুই পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই খামারির বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, ওই ছেলে মায়ের সঙ্গে খামারের পাশ দিয়ে শহরে যাচ্ছিল। তখন ছেলেটি মাটিতে পড়ে থাকা একটি কমলা তুলতে গেলে ওই কৃষক তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়।