মানব পাচারের শিকার তিন বাংলাদেশি ৯ বছর ধরে বন্দী থাইল্যান্ডের কারাগারে
কক্সবাজারের মহেশখালীর তিন বাংলাদেশি- মো. মোজাহার মিয়া (৫৫), মো. আজিজুল হক (৩১) এবং মো. মকসুদ মিয়া (৩২) নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
২০১৩ সালে তারা একজন মানব পাচারকারীর মাধ্যমে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ডে চলে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তাদেরকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়।
এরপরের ছয় বছর তাদের কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। ২০১৯ সালে মানব পাচারকারীর মাধ্যমে থাইল্যান্ডে যাওয়া আরেক বাংলাদেশি ওই তিনজনের খোঁজ দেন তাদের পরিবারকে। তাকেও ওই তিনজনের সাথে একই হাজতে রাখা হয়।
এরপর থেকেই মোজাহার, আজিজুল ও মকসুদের পরিবার তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা বৃথা গেছে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন অধরা
যে বার্তাবাহক ওই তিন ব্যক্তির পরিবারকে তথ্য দিয়েছিলেন, তিনি তাদের কারাগারের নাম, এমনকি তাদের সনাক্তকরণের নম্বরও উল্লেখ করেছিলেন।
আটককৃত ব্যক্তিদের পরিবার তাদের স্বজনদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু তিন বছর পরও এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মোজাহার মিয়ার মেয়ে রাশেদা খাতুন ফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখানে কোনো সমাধান খুঁজে না পেয়ে আমার মা ঢাকার থাই দূতাবাসে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।"
"এখন আমার মা হাসপাতালে ভর্তি। আমার বড় ভাই বিয়ে করে আলাদাভাবে সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। মা এখন আমার ছোট ভাই এবং আমার ভরণপোষণের জন্য কোনোমতে বেঁচে আছেন," বলেন তিনি।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সহায়তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার শাখায় আবেদন করেছে মোজাহার, আজিজুল এবং মকসুদের পরিবার।
প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার এই প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।
মকসুদ মিয়ার ভাই নুরুল কবির বলেন, "একজন কর্মকর্তা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে তারা খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।"
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে মানব পাচারের বিষয়টি মূলত আলোচনায় আসে ২০১৫ সালে। সেবছর থাই পুলিশ দক্ষিণ থাই জঙ্গলের গভীরে পাহাড়ের ধারে এক সন্দেহভাজন পাচার শিবিরের কাছে একটি গণকবরের সন্ধান পায়। তাদের ধারণা অনুযায়ী, গণকবরটি ছিল বাংলাদেশিদের।
অন্তত ৩২ জনকে ওই স্থানে সমাহিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের নিষ্ঠুর পরিণতির প্রাথমিক কারণ হিসেবে মানব পাচারকে চিহ্নিত করেছেন।
তিনি বলেন, "সমন্বয়ের অভাবে অনেক বাংলাদেশি তাদের সাজা শেষ করার পরেও পরিচয় ছাড়াই থাইল্যান্ডের কারাগারে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছেন।"
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে শুধু থাইল্যান্ডেই ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বন্দী ছিল।