‘ব্র্যান্ড নিউ’ হৃদয়ে দুর্বার সিলেটের তিনে তিন
'বিপিএলের কোনো আসরেই বলার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেনি সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি, এবার আপনার নেতৃত্বে ভাগ্য বদলাবে সিলেটের?' এবারের বিপিএল শুরুর আগে এই প্রশ্নটা কয়েকবার শুনতে হয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। কোচিং স্টাফদেরও দিতে হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর। ভালো শুরুর পর ম্যাচ ধরে এগোনোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন সবাই। এখন পর্যন্ত সেভাবেই হচ্ছে সবকিছু।
দাপুটে জয়ে বিপিএল মিশন শুরু করা সিলেট দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নেয়। তৃতীয় ম্যাচেও একই ধারায় আছে দলটি। এবার তাদের শিকার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের বর্তমান চাম্পিয়নদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে দুর্বার হয়ে ওঠা সিলেট স্ট্রাইকার্স।
বিপিএলে সিলেটকে নতুন রূপে দেখা যাচ্ছে, যাদের সামনে সব প্রতিপক্ষই মাথা নোয়াচ্ছে। এই পথচলায় নিজেকে নতুনভাবে হাজির করেছেন তাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয়। বাংলাদেশের বিশ্বজয়ী যুব দলের এই সদস্য পাওয়ার হিটিংয়ে অভাবনীয় উন্নতি করে সেটার ছাপ রেখে যাচ্ছেন ২২ গজে। দ্বিতীয় ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানো হৃদয় এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, তুলে নিয়েছেন টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে কুমিল্লা। হাফ সেঞ্চুরিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন জাকের আলী অনিক। এ ছাড়া রানের দেখার পান দাভিদ মালান ও সৈকত আলী। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি, সিলেটের স্কোরকার্ডে জমা পড়ে ৬ উইকেটে ১৪৯ রান। জবাবে ম্যাচসেরা হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরি এবং জাকির হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ১৪ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় সিলেট।
টানা তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে মাশরাফির দল। একটি করে ম্যাচ জেতা রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডমিনেটর্স যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বরে আছে। পরের চার দল খুলনা টাইগার্স, ফরচুন বরিশাল, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্চার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোনো জয় পায়নি। টানা দুই ম্যাচ হারা একমাত্র দল কুমিল্লা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি সিলেট। দলীয় ১২ রানেই ওপেনার মোহাম্মদ হারিসকে হারায় তারা। এরপর গত ম্যাচের মতো জুটি গড়ে তোলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। এই জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। ২১ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৯ রান করে শান্ত বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি।
এরপর জাকির হাসানের সঙ্গে হৃদয়ের ৩০ রানের জুটি। এই সময়টাতে কুমিল্লার বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন জাকির-তৌহিদ। অবশ্য জাকিরের ঝড় স্থায়ী হয়নি। ১০ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ রান করে বিদায় নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জাকিরের বিদায়ের পর সিলেট আরেকটি জুটি পায়, এবার হৃদয়ের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।
এই জুটি থেকে ৪২ রান পায় সিলেট। মাঝে বিপিএলের টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। কেবল রান করাই নয়, শট বাছাই থেকে শুরু করে শট খেলা, শট খেলার সামর্থ্য বাড়ানো; সব দিক থেকেই নিজেকে বদলে ফেলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। চোখ ধাঁধানো সব শটে ৩৭ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৬ রান করে আউট হন তিনি।
এরপর থিসারা পেরেরা ও আকবর আলীকে বাকি কাজ সারেন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ২৫ বলে ২টি চারে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। পেরেরা ৮ রান করে আউট হন। ৬ রানে অপরাজিত থাকেন আকবর। কুমিল্লার মোহাম্মদ নবী ও খুশদিল শাহ ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান আবু হায়দার রনি।
এর আগে ব্যাটিং করা কুমিল্লার ইনিংসজুড়ে একটি নাম বড় করে, জাকের আলী। ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ৪৩ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৭ রান করেন। ৩৯ বরে ৩টি চারে ৩৭ রান করেন মালান। ১২ বলে ৪টি চারে ২০ রান করেন সৈকত আলী। বাকিদের কেউ ৮ রানের বেশি করতে পারেননি। সিলেটের পেরেরা ও মোহাম্মদ আমির ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মাশরাফি ও ইমাদ ওয়াসিম।