অবিশ্বাস্য হৃদয়ে অপ্রতিরোধ্য সিলেটের চারে চার
ব্যাট হাতে শাসন করবেন তৌহিদ হৃদয়, আর জয়ের হাসি হেসে যাবে সিলেট স্ট্রাইকার্স; রসায়ণটা জমেছে বেশ। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এখন পর্যন্ত সিলেটের গল্পটা এমনই। গত কয়েক মাসে রেঞ্জ হিটিংয়ে কাজ করে নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলা হৃদয় রানের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছেন, সেই ফোয়ারায় জয়ের গল্প লেখা হচ্ছে সিলেটের। চতুর্থ ম্যাচেও দেখা গেল একই দৃশ্য, এবার তাদের শিকার ঢাকা ডমিনেটর্স।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকাকে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার সিলেট। চলতি বিপিএলে এটা তাদের টানা চতুর্থ জয়। স্বাভাবিকভাবেই ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটি। ঢাকা পর্বে রাজত্ব কায়েম করা সিলেটের মিশন এবার চট্টগ্রামে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। আগামী ১৬ জানুয়ারি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হবে সিলেটের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করেত নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। নাজমুল হোসেন শান্তর পর ম্যাচ সেরা তৌহিদ হৃদয়ের ঝলমলে ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ২০১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তারা। জবাবে ঢাকার হয়ে কেবল মোহাম্মদ মিথুন ও অধিনায়ক নাসির হোসেনই যা লড়েছেন, বাকিরা কেউ ব্যাট চালাতে পারেননি। এ দুজনের বাইরে কেবল দিলশান মুনাবিরা দুই অঙ্কের রান করেন, বাকিরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। মাশরাফি, আমির, ইমাদদের বোলিংয়ের সামনে ১৩৯ রানে থেমে যায় ঢাকার ইনিংস।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা চরম অগোছালো হয় ঢাকার। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারানো দলটি ৩০ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেট খোয়ায়। একে একে ফিরে যান আহমেদ শেহজাদ, দিলশান মুনাবিরা ও সৌম্য সরকার। দিকহারা দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নেন মিথুন ও নাসির। এই জুটিতে আশাও জাগে ঢাকার।
চতুর্থ উইকেটে ৪৭ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন, বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমেও তখন জয়েই দৃষ্টি ছিল দলটির। কিন্তু ২৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করে মিথুন ফিরলে আবারও এলোমেলো হয়ে পড়ে ঢাকার ইনিংস। নাসির এক পাশ ধরে লড়াই করতে থাকলেও অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকে।
উসমান গনি, আরিফুল হক, তাসকিন আহমেদরা সঙ্গ দিতে পারেননি নাসিরকে। দলীয় ১২০ রানের সময় নাসিরও খেই হারান। এর আগে ৩৫ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৪ রান করেন ঢাকার অধিনায়ক। ঢাকা নবম উইকেট হারানোর পর জয় নিশ্চিত হয়ে যায় সিলেটের, কারণ চোট পাওয়া মুক্তার আলী ব্যাটিং করেননি। ৩ ওভারে ১৪ রানে মাশরাফির শিকার ২ উইকেট। আরও আগুনে বোলিং করা আমির ৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ২৪ রানে ইমাদও নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন রাজা, পেরেরা ও শান্ত।
এর আগে ব্যাটিং করা সিলেট স্ট্রাইকার্স শুরুটা ভালো না করলেও চাপ বোঝেনি। দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়াটা নিয়মে পরিণত করে ফেলা নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয় এই ম্যাচেও দলকে পথ দেখান। শুরুর উইকেট হারানোর চাপ মুহূর্তেই কাটিয়ে তুলে পাল্লা দিয়ে রান তোলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। যথারীতি এবারও নেতৃত্বে থেকেছেন নিজেকে নতুন করে চিনিয়ে চলা হৃদয়।
দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও হৃদয়। দলীয় সংগ্রহ ১০০ পেরোনোর পর থামেন দারুণ ছন্দে থাকা শান্ত। সিলেটের বাঁহাতি এই ওপেনার ৩৯ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্বায় ৫৭ রান করেন। এরপর কেবলই ম্যাচসেরা হৃদয়ের ব্যাটিং শো। আগের দুই ম্যাচে টানা হাফ সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে আরও খুনে ব্যাটিং করেন।
চোখ ধাঁধানো সব শটে ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ঢাকার বোলারদের শাসন করেন সিলেটের ব্যাটিং কাণ্ডারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা হৃদয়। ঢাকার পেসার আল আমিনের বলে আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৮৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য।
৪ ম্যাচে তিন ইনিংসে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৬৫ গড়ে ১৯৫ রান করেছেন হৃদয়, যা এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ। ১৬৭ রান নিয়ে দুই নম্বরে আছেন তারই সতীর্থ শান্ত। টানা চতুর্থ জয় তুলে নেওয়ার ম্যাচে জাকির হাসান ১০ ও থিসারা পেরেরা ১১ রান করেন। ঢাকার আল আমিন ৩টি ও তাসকিন আহমেদ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান আরাফাত সানি ও আরিফুল হক।