ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় চিরতার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে বিএসএমএমইউ
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় চিরতার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল তথা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
বিএসএমএমইউয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হওয়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বহির্বিভাগে আসা ৪০ জন রোগীর ওপর চিরতা দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল প্রয়োগ হবে। রোগীদের আগামী ছয় মাস এই ওষুধটি দেওয়া হবে। ছয় মাস পর প্রাথমিক ফলাফল জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, মানুষের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। ফ্যাটি লিভারের কারণে যকৃতের নানা রোগ হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বুধবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউ'র উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ'র ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি বলেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, চিরতার একটি উপাদান অ্যান্ডোগাফোলাইড ফ্যাটি লিভারে ভালো কাজ করে।
তিনি বলেন, "চিরতার কোন উপাদানটি ফ্যাটি লিভারের কোন কোন অংশে কাজ করে তা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আমরা দেখেছি ফ্যাটি লিভারের পাঁচটি জায়গায় চিরতা কাজ করে। কতটুকু চিরতা দিলে কতটা অ্যান্ডোগাফোলাইড থাকবে সে হিসাব করে ৩৩০ মিলিগ্রামের ক্যাপসুল তৈরি করা হয়েছে। এই ক্যাপসুলগুলোই রোগীদের দেওয়া হবে।"
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, "৪০ জন রোগীর মধ্যে প্রথম ২০ জনকে ৩৩০ মিলিগ্রামের তিনটি ক্যাপসুল দিনে তিনবার দেওয়া হবে। আর দ্বিতীয় দলে ২০ জনকে দেওয়া হবে দিনে দুইবার। রোগীরা বাসায় বসে ওষুধ সেবন করবেন। তাদের নিয়মিত ফলোআপ করা হবে, আমরা টেলিফোনে তাদের খোঁজ রাখব। তারা হাসপাতালেও আসবেন। ৬ মাস পর তাদের পরীক্ষা করে দেখা হবে ওষুধ কতটা কাজ করেছে।"
ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডা. সাব্বির হোসেন জানান, "১৮-৬৫ বছর বয়সী রোগীদের এ ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারী, হেপাটাইটিস বি, সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা এতে অংশ নিতে পারবেন না।"
অনুষ্ঠানে ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, "বিএসএমএমইউ গবেষণায় জোর দিচ্ছে। কোভিডের সময় এখানে ভাইরাসটির ফুল জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। গবেষণা বাজেটও ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।"
ডা. স্বপ্নীল বলেন, "প্রতিবেশী দেশ ভারত আয়ুর্বেদ খাত থেকে প্রতি বছর ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে। এদেশের স্থানীয় হারবাল ওষুধগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে ঠিকমত উপস্থাপন করা হলে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারবে।"
"বর্তমান পৃথিবীতে যখন পরিবেশবান্ধব, অর্গানিক খাদ্য ও চিকিৎসার উপর জোর দেয়া হচ্ছে, তখন এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভবনাও বেশ উজ্জ্বল। এ কারণেই আমরা বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি", যোগ করেন তিনি।