কী ছাপবেন? বই, পোস্টার, পত্রিকা, লেবেল- সব সমাধান আছে ফকিরেরপুলে!
পানির ট্যাংকির গলিতে ঢুকে হাতের ডান দিকে অল্প পরেই হলুদ-মরিচ ভাঙানোর একটি ঘর। এর যে মালিক, তার জন্ম ফকিরেরপুলে ১৯৬৫ সালে। ১৯৮৬ সালে তিনি যখন সৌদি আরব যান, তখনো ফকিরেরপুলে ছাপাখানা ছিল হাতে গোনা। চার বছর পর ১৯৯০ সালে যখন ফিরে এলেন তখন দেখলেন সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে তিনি জানালেন, ছাপাখানা বেশি আরামবাগ, গরম পানির গলি আর ১ নং গলিতে।
ফকিরেরপুলে যে কারণে
কিন্তু কেন ফকিরেরপুল এলাকায় ছাপাখানা পাড়া গড়ে উঠল? প্রশ্নটির উত্তর জানতে ঘুরতে হলো বেশ কিছু সময়। শেষে শুক্কুর পাগলার লেনের এক কাটিং হাউজে দুইজন বয়স্ক ব্যক্তি পাওয়া গেল। এদের একজন শরীফুল ইসলাম, আশির দশকে কাজ করতেন মতিঝিলের সোনারগাঁও প্রিন্টিং প্রেসে। তিনি বললেন, 'আসলে ফকিরেরপুল ছিল মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার কর্মচারীদের থাকার জায়গা। প্রায় সব বাড়িতেই ছিল মেস। আর বাড়ি বলতে বেশিরভাগই ছিল ছাপড়াঘর। দু'চারটি তিন বা চারতলা বাড়ি ছিল। আশির দশকে এখানে ছোট ছোট ছাপাখানা বসল যেগুলোয় মতিঝিলের বিভিন্ন অফিসের ক্যাশ মেমো, ভাউচার, প্যাড ইত্যাদি ছাপা হতো। ভিজিটিং কার্ড তখন একটা বড় ব্যাপার বটে। তাও ছাপা হতে থাকল। লেটার প্রেসের আমল তখন শেষের দিকে। মিনি প্রেস বলে অল্প জায়গায় আঁটে এমন ছাপযন্ত্র ছিল বেশি। এগুলো মূলত সিঙ্গেল কালারের অফসেট যন্ত্র। কর্ড নামের আরেকটি ছাপযন্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছিল।
জার্মানির হাইডেলবার্গ কোম্পানি এটি ষাটের দশকে বাজারজাত করেছিল তবে আমাদের এখানে তখনো এটা নতুন প্রযুক্তি। অধিক গতিসম্পন্ন এই যন্ত্র দিয়ে বড় কাগজেও ছাপানো যেত। ওদিকে পুরানো ঢাকায় ছাপা হতো বেশি বই বা পঞ্জিকা। সেগুলো ছিল এক রং মানে কালো কালির কাজ। আশির দশকের শেষ দিকে বর্ণিল কাজের চাহিদা বাড়তে থাকল যা পুরানো ঢাকার বাংলাবাজার, বাবুবাজার বা জিন্দাবাহারে করা সম্ভব হচ্ছিল না। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যালেন্ডারের কথাই ধরা যাক। ক্যালেন্ডারে বিগত বছরের সাফল্য বা অগ্রগতি তুলে ধরতে চাইছিল প্রতিষ্ঠানগুলো, তার জন্য প্রয়োজন পড়ছিল একাধিক রঙের ব্যবহার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ছিল মতিঝিলে, তাই কাছের আরামবাগ বা ফকিরেরপুলে কালার প্রেসগুলো বসতে থাকল। নব্বইয়ের দশকে গার্মেন্টস আর ওষুধ শিল্পেরও বিকাশ ঘটল ব্যাপকভাবে। ফকিরেরপুলে ছাপাখানা শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে এদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।'
ওষুধের শিশিতে লেবেল
ওষুধশিল্প কীভাবে ভূমিকা রাখছে তার নমুনা দেখালেন সোনাগাজী পোলার কাটিংয়ের মিজান। মিজানের বয়স ২৭ বছর। ১২ বছর বয়স থেকে সে কাজে লেগেছে। সে হিসাবে ১৫ হলো তার ছাপাখানা শিল্পে। বাড়িতে সৎ মায়ের জ্বালা সইতে না পেরে মিজান চলে এসেছিল ঢাকায়। নয় বছর সে কাজ শিখেছে, পেপার কাটিংয়ের কাজ। ছয় বছর হলো দাঁড় করিয়েছেন নিজের প্রতিষ্ঠান। জার্মানীর পোলার কোম্পানীর মোর নামের একটি ডাই কাটার মেশিনের মালিক তিনি। সেসঙ্গে তার একটি পাঞ্চ মেশিনও আছে। ১ জন সহকারী নিয়ে ছোট একটি ঘরে তার কারখানা। তিনি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ওফকোফ সিরাপের একটি বোতল দেখালেন। বোতলের গায়ে একটি লেবেল লাগানো। তাতে সিরাপটির গুণাগুণ, পরিমাণ ইত্যাদি নানান কিছু লেখা আছে। দেখানো শেষ হলে মিজান বললেন, 'এমন একটি লেবেলে খরচ পড়ে ২০ বা ২৫ পয়সা। কিন্তু যে মেশিনে এটা তৈরি হয় তার দাম কোটি টাকার কাছে। আচ্ছা ধরেন, আপনি যাবেন মিরপুর, এখন আপনি কি একটা বাসই কিনে ফেলবেন নাকি বিকল্প বাস সার্ভিসে করে ত্রিশ টাকা ভাড়ায় যাবেন? নিশ্চয় ত্রিশ টাকা ভাড়ায় যাওয়াই স্থির করবেন। তারপর ধরেন স্কয়ার কোম্পানির আসল কাজ ওষুধ তৈরি করা। ওষুধেই তার আসল ব্যবসা, এখন তারা যদি প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করে তাহলে কিন্তু লস কারণ এতে যে সময় যাবে তা দিয়ে তারা আরো আরো ওষুধ তৈরি করতে পারবে, লাভও করতে পারবে বেশি।'
ওষুধ কোম্পানির লোকেরাই কি এগুলো ছাপিয়ে নেয়? জিজ্ঞেস করলাম মিজানকে।
মিজান জানালেন, একটি বিশেষ ধরনের পেশাজীবী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে এ কাজকে কেন্দ্র করে যারা ওষুধ কোম্পানি বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের আদেশপত্র জোগাড় করে। এরপর নিজে বা লোক দিয়ে প্রেসগুলো থেকে কাজ করিয়ে নেয়। সারা বছর ধরেই তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ জোগাড় করে থাকে। ফকিরেরপুলে তাদের অনেকেরই সুদৃশ্য অফিসঘর আছে। সেখানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার আর মার্কেটিংয়ের লোক বসে। এসব কাজে টাকা যেমন আছে ঝামেলাও কম নেই। ওষুধ কোম্পানী যখন তাদের নতুন কোনো প্রোডাক্টকে পরিচিত করতে চায় তখন যে পরিচিতিপত্র প্রকাশ করে সেটা খুবই জমকালো আর সুদৃশ্য হয়। এগুলোর ছাপা আর কাটিং বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে থাকে। কোনো একটিতে গড়মিল হলেই কর্তৃপক্ষ পুরো আদেশপত্র বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এমন একটি আদেশপত্র বাতিল হলে লাখ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়।
আর কী কী ছাপা হয় ফকিরেরপুলে? জানতে চাইলে মিজান বললেন, 'কাগজে যত ছাপাছাপির কাজ দেখেন সব হয় এখানে যেমন রেস্তরাঁর মেন্যু কার্ড, মাথায় চুল গজানোর প্রচারপত্র, ডাক্তারের প্যাড, ফোন কোম্পানীর ফ্লায়ার, বিল্ডিং ডেভেলপার কোম্পানীর ভবন পরিচিতি, শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর ব্রুশিয়ার, নির্বাচনী পোস্টার, টিস্যু পেপার বক্স ইত্যাদি।'
তবে মিজান শংকিত ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। এর ফলে প্রিন্টিং বিজনেসে মন্দা তৈরি হয়েছে ব্যাপক। যেহেতু এ কাজের বেশিরভাগ উপকরণই আমদানি করতে হয় তাই আমদানিকারকদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে উৎপাদন ব্যয়। ওদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে গেছে। ছাপাখানা কর্মীদের জীবন চালাতে আগের চেয়ে অধিক মজুরির প্রয়োজন হচ্ছে। অন্যদিকে যারা কাজের আদেশপত্র দেন তারা খরচ কমানোর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। ব্যাপারটি সব দিক থেকেই বিপদ তৈরি করছে।
'অন্য সময় আমার দোকানের কাছে দাঁড়ানোর জায়গা পেতেন না আজ কিন্তু ভিড় অতটা দেখছেন না, কারণ কাজ কমে গেছে', বলে ওঠেন মিজান।
মিজানের একটি পাঞ্চ মেশিনও আছে। এটি দিয়ে তিনি হ্যাং ট্যাগের ফুটো তৈরি করেন। এই হ্যাং ট্যাগ ফকিরেরপুলের একটি কোয়ালিটি প্রোডাক্ট। বছর দশ আগেও এটি ছাপানোর জন্য ফকিরেরপুলের বিকল্প ভাবা যেত না। এটি মূলত গার্মেন্টসের প্রোডাক্ট। জামা, প্যান্ট বা গেঞ্জির সঙ্গে সুতো দিয়ে এরকম ট্যাগ ঝুলতে দেখেছি আমরা সকলেই। এগুলোতে সাইজ লেখা থাকে, মূল্যও লেখা থাকে, ব্র্যান্ডনেম লেখা থাকে। এগুলো আর্ট পেপার, সুইডিশ পেপার বা বোর্ড পেপারে ছাপা হয়ে থাকে।
'কোয়ালিটি কাজ' বলে কথা
ফকিরেরপুলের নাম বেশি 'কোয়ালিটি' কাজের জন্যই। মেঘলা প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী মহিদুল ইসলাম মনির কোয়ালিটি কাজের টানেই এসেছিলেন ফকিরেরপুলে। অথচ তার শুরুটা হয়েছিল নারিন্দায়। ৪২ বছর বয়স এখন তার। ঢাকায় এসে কাজে লেগেছিলেন ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়। বাবার কষ্ট সে বুঝতে পারছিল। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। মনিরের এলাকার লোকেরা ছিল প্রেস লাইনে। মনির তাদের একজনের মারফত ছাপাখানায় এসে হেলপার হয়েছিল। হেলপার মানে যে মহাজনের জন্য চা আনে, মেশিনম্যানের জন্য কালি (রং) আনে, কাটার মাস্টারের জন্য কাগজ আনে, অ্যাসিস্ট্যান্ট মেশিনম্যানকে রং মেশাতে সাহায্য করে মানে যার যখন যা দরকার তা করে হেলপার। সব হেলপারের স্বপ্ন থাকে মেশিনম্যান হওয়ার। তবে এর জন্য কয়েকটি ধাপ পার হতে হয় আর ৭-৮ বছর লেগে যায়।
একাধিক রঙ মিশিয়ে প্রয়োজনীয় রঙ তৈরি থেকে শুরু করে, কাগজ ঠিক জায়গায় রাখা, ছাপা হওয়া কাগজের গুণমান পরীক্ষা করা এমনকি মেশিন সারাইয়ের কাজটিও জানা লাগে মেশিনম্যানের। মনির ছিল 'চালু' ছেলে, সবাই তাকে আদর করত। তাই তার কাজ শেখা হয়ে গিয়েছিল। তবে শুধু কালো কালির কাজ করে তার মন ভরছিল না। '৯৫ সালের দিকে মনির চলে আসে ফকিরেরপুলে। এখানে হ্যাং ট্যাগের কাজ দেখে তার শেখার আগ্রহ জন্মে। এছাড়া ট্রান্সপারেন্ট স্টিকার ছাপার কাজটিও তার চ্যালেঞ্জিং মনে হলো। এছাড়া ফয়েল পেপারের ওপর লেখা ফোটানোও সোজা কাজ মনে হলো না।
ফকিরেরপুলে এসে মনিরের তাই মনে হলো, এটা এক মহাসমুদ্র যেখানে কাজের শেষ নেই। শেখার সুযোগ যেমন অনেক, পারার সুযোগও অনেক আর যত ভালো পারবে তত উপার্জন। মনিরের মনে পড়ে গেল ৩০০ টাকা বেতনে সে কাজ শুরু করেছিল। তারপর বেড়ে হয়েছিল ৭০০ টাকা। একসময় পেত ১৫০০ টাকা। এসবই নারিন্দায় থাকার সময়ই। কিন্তু ফকিরেরপুলে এসে সে কাজে লাগে ১২০০ টাকায়। শেখার নেশা তাকে পেয়ে বসেছে, তাই বেতন কিছু কম হলেও সে চলে এসেছিল ফকিরেরপুল। চার-সাড়ে চার বছর পর কাজ সে যখন পুরোটা শিখে নিল, তখন একদিন ১০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে মনির খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।
মনির মরিশাস গিয়েছিলেন
তারপর মনিরের সুযোগ আসে মরিশাস যাওয়ার। সেখানে সে একটা ছাপাখানায় মেশিনম্যান হিসাবে কাজ করতে থাকে। হ্যাং ট্যাগ ছাপানোর দক্ষতা থাকায় মনির মালিকের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব নিয়েছিল মালিক, সেইসঙ্গে মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতন। কিন্তু এ সুখ বেশিদিন সইল না। বাংলাদেশি এক ছেলে মালিকের স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে সবার চাকরি চলে গেল। মনির চলে এলো দেশে। বাড়ি এসে একটা মোটরসাইকেল কিনল। সাহেবের মতো সেজেগুজে বের হয়ে বাজারে যেত। ১০০০ টাকার একটা নোট নিয়ে বাজারে গিয়ে সবটাই খরচ করে আসত। একদিন ভাবল, এভাবে চললে তো আর কিছু বাকি থাকবে না। আবার ফিরল ফকিরেরপুলে। এক বন্ধুর সঙ্গে পার্টনারশিপে সেকেন্ড হ্যান্ড একটা জিটিও মেশিন কিনল সাড়ে আট লাখ টাকায়। আরো পরে পার্টনার বন্ধুটি তার শেয়ার তুলে নিতে চাইলে মনির নিজে সবটার মালিক হলো। তারপর দিন রাত কাজ করতে থাকল কখনো হ্যাং ট্যাগের, কখনো স্টিকারের, কখনোবা ক্যালেন্ডার ছাপানোর। মনিরের সুনাম ছড়িয়েছে তার কাস্টমারদের মাধ্যমেই। যারা তার কাছ থেকে আগে কাজ করিয়ে নিয়েছে তারাই গিয়ে অন্যদের কাছে তার কাজের সুনাম করেছে। ফলে একজন থেকে অন্যজনে নাম ছড়িয়ে পড়েছে। মনির বিশ্বাস করে, আন্তরিকতা থাকলে জীবনে উন্নতি করা যায়। আরেকটি ব্যাপার হলো, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। ভালো ব্যবহারের কারণে মানুষ মানুষকে মনে রাখে।
আরেকটা জিটিও মেশিন কিনেছেন মনির তিন বছর। আগামীতে একটা এমো মেশিন কেনার ইচ্ছা আছে তার। জিটিও মেশিনে এক দফায় একটা রঙই চাপানো যায়, চার রঙের কাজ হলে চারবার কাগজ তুলতে হয় মেশিনে, ফলে সময় লেগে যায় বেশি। এমো মেশিন কিনলে সময় বাঁচবে অনেকটা আর বড় বড় কাগজে প্রিন্ট নেওয়া যাবে। বিশেষ করে স্টিকারের কাজ যখন আসে তখন কাগজ বড় হলেই ভালো, অফারের (বিশেষ সুযোগ) কাজেও বড় কাগজে সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। এগুলো ২ বাই ৩ ইঞ্চি কিংবা ৪ বাই ৫ ইঞ্চি মাপের হয়। বড় কাগজ মেশিনে চাপালে একসঙ্গে অনেকগুলো প্রিন্ট করা যায়, তারপরে মাপমতো কেটে নিলেই হয়। নিজের পরিবার নিয়ে মনির ঢাকাতেই থাকেন, বাবা-মা অবশ্য গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
মনিরদের বাড়ি মানিকগঞ্জে। ফকিরেরপুলের প্রেস কর্মীদের প্রায় ষাট ভাগ মানিকগঞ্জের। টাঙ্গাইলেরও আছে অনেক। কিছু আছে বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকার। আর কিছু মুন্সিগঞ্জের। প্রেস কর্মীরা সাধারণত মেস করে থাকেন।
এখন যেমন আছে
শুক্কুর পাগলার লেনের শরীফুল ইসলামের কাছে জেনেছিলাম, প্রায় ২৫০০ প্রেস আছে আরামবাগ, ফকিরেরপুল এলাকায়। এগুলোতে সরাসরি জড়িত কর্মীর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার হতে পারে। তবে নানাভাবে ছাপাখানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এ তল্লাটে যেমন ছাপাখানার রঙ বিক্রি করে এমন দোকানের সংখ্যা শখানেক হয়ে যাবে। এসব দোকানে কোরিয়া, জাপানের কালি বেশি পাওয়া যায়। আরো পাওয়া যায় মবিল, ডিজেল, কেরোসিনসহ শতাধিক আইটেম। শুধু গাম, স্কচ টেপ এবং আঠা বিক্রি করে এমন দোকানের সংখ্যাও হবে ২০-২৫টি। তারপর আছে কাগজের দোকান। সুইডিশ বোর্ড, আর্টকার্ড, হোয়াইট বোর্ডের মতো দামী দামী কাগজ বিক্রি হয় ওই সব দোকানে।
বেশ পরিমাণে প্যাকেজিংয়ের কাজও হয় ফকিরেরপুল এলাকায়। আছে লেমিনেটিং প্রতিষ্ঠানও। ফকিরেরপুল নামটি হয়েছে একজন কামেল ফকিরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এখানকার পুরোনো ছাপাখানাগুলোর মধ্যে রফিকের বর্ণমালা অন্যতম। ভাষা শহীদ রফিকের ভাইয়ের ছেলেরা এ প্রেসটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এখন আর কোয়ালিটি প্রিন্টিংয়ের ব্যবসায় ফকিরেরপুল একচেটিয়া নয়। বেশসংখ্যক প্রেস প্রতিষ্ঠা হয়েছে নীলক্ষেতে, কিছু আছে মিরপুরেও। এছাড়া কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান কম্পোজিট প্রেস প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে ছাপানো, কাটিং, লেমিনেটিং এবং প্যাকেজিংসহ সব কাজ করা যায়। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও বিপদ ডেকে আনছে। সব মিলিয়ে ফকিরেরপুল আগের মতো রমরমা নেই।