৫ সিটি নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেবে আওয়ামী লীগ! আশঙ্কা বিএনপির
আগামী মে ও জুন মাসে দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সিটিতে দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কার প্রার্থী দেবে। জাতীয় পার্টিও দলীয় প্রার্থী দেবে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ এ পাঁচ সিটিতে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।
কারণ পাঁচ সিটি গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা এবং সিলেটে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়। এর আগে ২০১৩ সালে এই সিটিগুলোর নির্বাচনে সবগুলোতেই বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হন, যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বেশ কিছু দিন আগে।
২০১৮ সালে সিটিগুলোর মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। কিন্তু সিলেটে বর্জন করেনি। সেবার সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক, যিনি বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
আবার সাম্প্রতিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের মতো 'নতুন উকিল'-এর আবির্ভাবেরও আশঙ্কা করছে বিএনপির অনেক নেতা। এ পরিস্থিতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে কিছুটা 'বিপাকে' পড়তে পারে বিরোধী দলটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে বিএনপির ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করেছে। দেশি-বিদেশিদের চাপের মুখে পর্দার আড়ালে বিএনপির কতিপয় নেতাকে বিজয়ী করা বা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে আগামী সিটি নির্বাচনে দুয়েকটি সিটিতে প্রার্থী করার চেষ্টা করবে।
বিএনপির অনেকেই মনে করেন, সিলেটে 'উকিল আবদুস সাত্তার মডেল' অনুসরণ করতে পারে আওয়ামী লীগ।
তবে ওই সিটির নির্বাচনে বিএনপি যে সিদ্ধান্ত দেবে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সেটিই মেনে নেবেন বলে কয়েক দিন আগে জানান তিনি। বর্তমান তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ৫ সিটি নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। আওয়ামী লীগ ৫ সিটিতেই দলীয় প্রার্থী দেবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, দক্ষতা বিবেচনায় মনোনয়ন দেওয়া হবে। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করবে দলের নেতাকর্মীরা। এরপর দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে দলীয় প্রার্থী দেবে। মহাজোটের সাথে লিয়াজোঁ করে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না। মহাজোট শুধু জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সমন্বিত প্রার্থী দেবে আগের মতো।
'বিএনপি সিটি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবে না বা দলের কোনো নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে, এতে করে নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে', এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনে না আসলে কিছু আসে যায় না। কারণ অন্য সব দল দলীয় প্রার্থী দেবে। বর্তমানের প্রেক্ষিতে অস্ত্বিত্ব নিয়েই সংকট আছে দলটি, ফলে তারা প্রার্থী দিতে সক্ষম নয়।'
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পরও যদি স্থানীয় কোনো নেতা 'বিদ্রোহী' প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়, দল তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে এবং বহিষ্কার করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামীতে সিটি করপোরেশনসহ কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।'
এ মুহূর্তে সরকারের পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তারা এখন যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির কোনো নেতা সিটি নির্বাচনে যাবেন না। আর যদি কেউ যায়, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, '৫ সিটিতেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি। এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।' কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৪ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। সেই বিবেচনায় সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে বর্জন করবে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেবে।'
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৫ সিটির নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ গুরুত্ব বহন করবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, 'এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তার ওপর নির্ভর করতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচন।'
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৪ সালের আগে ২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় সবগুলোতে তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল নিশ্চয় নজর রাখবে, কী রকম হবে আগামীর ৫ সিটি নির্বাচন। তার ওপর নির্ভর করেই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মতামত দেবেন তারা- যোগ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।
নির্বাচন কমিশন গত ৩ এপ্রিল এই ৫ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে হবে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে হবে ২১ জুন।
এছাড়াও পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে চায় বর্তমান কমিশন। তবে সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে চূড়ান্ত হবে।