ঈদের পর আলু, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়ল
সরবরাহ সংকটের কারণে ঈদের পর আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে। ১০ দিনের ব্যবধানে আলু ও পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর, মগবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা; ১০ দিন আগেও দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর পোঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা দিন দশেক আগেও ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকরি পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকরিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এখন দেশি পেঁয়াজ ৪৮-৪৯ টাকায় পাইকরি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
মগবাজার এলকার খুচর বিক্রেতা মোহম্মদ মাহফুজ বলেন, "আলু প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, এটা ঈদের আগে ছিল ২৫ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৫ টাকা, যেটা ৪৫ টাকা ছিল।"
এদিকে, ১০ দিনের ব্যবধানের দেশি আদার দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়; আর দেশি রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ শেষে আমদানি ও পাইকারি বাজারের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়ায় আড়তে মালের সংকট রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের খুরচা বিক্রেতা মোহম্মদ সাহিন বলেন, "সরবরাহ তুলনামূলক কম। তাই দাম বেড়ে গেছে। ঈদের পর মাল কিনতে গিয়ে দেখি আমদানি করা আদার প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যেটা ১০ দিন আগেও বিক্রি করেছি ১০০ টাকা করে। আর দেশি আদা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।"
মোহম্মদ সাহিন আশা করছেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাজারে সরবরাহ বাড়লে কমে আসবে এসব পণ্যের দাম।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে আমদানি করা আদার দাম এক বছরের ব্যবধানে ১৫২ শতাংশ বেড়ে ২০০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ১২০ টাকা। আলুর দাম ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার দাম এক বছর আগে ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।
এছাড়া, ঈদের আগে দাম বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি এখনও বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। ঈদের দুই দিন আগে দাম বেড়ে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
অন্যদিকে, ঈদের আগে থেকে চলমান চিনির সংকট এখনো কাটেনি। যেসব দোকানে খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
খুচরা দোকানিরা জানান, ঈদের পর অর্ডার দেওয়া অন্য পণ্য দিলেও চিনির দিচ্ছেন না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এছাড়া, ঈদের পর সবজির দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
কল্যাণপুর এলাকার সবজি বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, "সবজির সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তাই পাইকরিতে প্রতিটি সবজিই কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।"
ঈদের আগে রাজধানীর বাজারে শসা, গাজর, কাঁচামরিচের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছিল। ঈদের আগের দিন দেশি শসার কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে এখন চাহিদা কম থাকায় এসব পণ্যের দাম কমে এসেছে।
শুক্রবার কারওয়ান বজারে দেশি শসা প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় আর গাজর ও কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, টিসিবির হিসেবে সরু চালের (নাজির/ মিনিকেট) কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা, মাঝারী চাল (পাইজাম/লতা) প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫৬ এবং মোটা চাল (স্বর্ণা/ ইরি) কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
তবে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। ফাতেমা রাইস এজেন্সিতে দেখা যায়, প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা, আটাশ চাল ৫৩ থেকে ৫৫, পাইজাম ৫০ থেকে ৫২, এবং নজির শাইল ৭৬ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৫৪ শতাংশ বেড়ে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আর প্যাকেট আটার দাম ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়।