ভোটের আগে সিলেট বিএনপিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক
সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবু নির্বাচনের আগমূহূর্তে সিলেট বিএনপিতে দেখা দিয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। বিশেষত গত ১ মে বিএনপি নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিত দেয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও বাসায় বাসায় তল্লাশি চলছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
দলটির নেতারা বলছেন, গত ৪ দিনে বিএনপির অন্তত ১৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া আরো অনেক নেতার বাড়িতে প্রতি রাতেই অভিযান চালাচ্ছে। এতে নেতারা বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। ভোটের আগে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই পুলিশ এমনটি করছে বলে অভিযোগ তাদের।
তবে এমন অভিযাগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, কাউকে হয়রানি বা অযথা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যারা অপরাধী এবং যাদের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি অংশ না নিলেও দলটির নেতা আরিফুল হক চৌধুরী অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এমন গুঞ্জনের মধ্যেই গত ১ মে নগরে নিজের অনুসারীদের নিয়ে মহড়া দেন আরিফ। ওইদিন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি জানান, ২০ মে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আরিফের ইঙ্গিত দেওয়ার পরদিন ২ মে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে নগরে মিছিল বের করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। ওই মিছিল থেকে ছাত্রদলের ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পুলিশের উপর হামলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে ছাত্রদলের অন্তত ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এরপর থেকে গণগ্রেপ্তার শুরু হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, '২০ মে রেজিস্ট্রারি মাঠে আমি সমাবেশ ডেকেছি। ওই সমাবেশ থেকেই নির্বাচন নিয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট করব। আমার সমাবেশে যাতে জনসমাগম না হয় তাই পুলিশ বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে। আতঙ্ক ছড়াতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'সিলেটের রাজনীতিতে সবসময়ই একটা সম্প্রীতি ছিল। রাজনৈতিক বিরুদ্ধাচরণ থাকলেও পরমতসহিষ্ণুতা ছিল। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেকোনোভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হঠাৎ করে ভোটের আগে প্রশাসনে রদবদল করা হচ্ছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে।'
শুক্রবার রাতে সিলেট মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বুধবার দিবাগত রাতে মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ লাহিন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বদরুল ইসলাম, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিবুর রহমান আলী, ছাত্রদল নেতা ইমন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা হাবিবকে পুলিশ 'অহেতুক' গ্রেপ্তার করেছে।
বিবৃতিতে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, বুধবার দিবাগত রাতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লোকমানুজ্জামান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আহমদসহ দলীয় অনেক নেতা-কর্মীর বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের আটকের পর বিষয়টি পুলিশ অস্বীকার করে কয়েক ঘণ্টা পর তাদের গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, 'সিটি নির্বাচনের আগমূহূর্তে সিলেটে হঠাৎ করে পুলিশ বিএনপি নেতাদের ধরপাকড় শুরু করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে পূর্বের মামলায় অথবা নতুন কোনো মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।'
তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের প্রহসনের সিটি নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে না। আমাদের একজন নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ওই নেতার একটি বক্তব্যের পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে আনছে পুলিশ। পুরোনো মামলাগুলো হঠাৎ করেই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।'
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ শনিবার বিকেলে বলেন, 'বিএনপির অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। পুলিশ কাউকে হয়রানি বা অযথা গ্রেপ্তার করছে না। মামলার আসামিদের ধরা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। সেটাই করা হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলা হলে মামলা ও গ্রেপ্তার হবে, এটাই স্বাভাবিক।'
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।