ঢাকার সবচেয়ে বড় আন্ডারপাস, যুক্ত হবে বিমানবন্দর-রেল স্টেশন-বিআরটি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় আধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। যাত্রী ও পথচারীরা এর মাধ্যমে নিরাপদে বাস, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০৭০ মিটার দৈঘ্যের প্রস্তাবিত আন্ডারপাসটিতে নয়টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হলো: হজ ক্যাম্প, আশকোনা, বিমান বন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ এবং ৩, বিমান বন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট এবং এমআরটি স্টেশন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আধুনিক এই আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় হবে ১১৮৩.৮৭ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে এই অর্থের যোগান দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই শুরু হবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। আগামী দু বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়।
রেলওয়ে স্টেশন এবং এর চারপাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি বাস এবং মেট্রো স্টেশনসহ রাজধানীর ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বিমানবন্দর গোলচত্বর। এই এলাকায় একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এ সড়কে চলাচল করে।
গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা যায়। ফুটওভার ব্রিজ অপ্রতুল হওয়ায় বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও পথচারী এর নিচ দিয়েই রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে বিধায় এ জায়গায় প্রায়ই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়; ঘটে দুর্ঘটনা।
প্রস্তাবিত আন্ডারপাসটি তৈরি হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্ডারপাসটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে থাকবে আটটি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর এবং ২৫টি ট্রাভেলেটর।
আরএইচডি'র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. ইশাক বলেন, "প্রস্তাবিত আন্ডারপাস ব্যবহার করে হজ ক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশনে যাওয়া যাবে। যারা বিআরটি পরিবহন ব্যবহার করবে তারা আন্ডারপাসের মাধ্যমে রাস্তা পারাপার হতে পারবে। ভবিষ্যতে আন্ডারপাসটি একটি মাল্টিমোডাল হাব হিসেবে বিবেচিত হবে।"
তিনি আরো জানান, প্রথমবারের মতো এই ধরনের আন্ডারপাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো যাত্রী সেবা ট্রাভেলেটর থাকবে এই আন্ডারপাসে।
চলমান ওয়াকওয়ে হিসেবে পরিচিত ট্রাভেলেটর সাধারণত বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন বা শপিং মলের মতো জায়গায় মানুষের চলাচলে সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে আজ (১৮ মে) পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সভায় প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন সন্তুষ্ট হলে পরবর্তীতে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে জানান পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যা বাংলাদেশের ৩২ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।
ব্যস্ততম এই মহাসড়কের একপাশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিপরীত পাশে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন। বাস্তবায়নাধীন বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, এমআরটি লাইন-১, ঢাকা আশুলিয়া এক্সেপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্প বাড়িয়ে দিয়েছে এই অঞ্চলের কর্মব্যস্ততা।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৪,৭৭৭ জন পথচারি ও যাত্রী একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে এই মহাসড়ক পারাপার হন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ডিপিপিতে আরো বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এলাকায় নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিআরটি বাস সুবিধা। এছাড়া এমআরটি -১ এর বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় যাত্রী চাপ বাড়বে।
এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ৩,৬০,০০০ যাত্রী এ এলাকায় চলাচল করবে। এর একটা বড় অংশ আন্ডারপাসের সুবিধা নেবে।
বেসমারিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক মাস্টারপ্ল্যানে একটি মূল পথচারি টানেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিমানবন্দরের এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের আগে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী, বিমানবন্দরটি ২০৩৫ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আন্ডারপাস নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় পথচারি আন্ডারপাস অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করতে একটি কমিঠি গঠন করে।
কমিটি পুনরায় পরিদর্শন করে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে। ২০১৯ সালের মার্চে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরো জানান, সম্প্রতি আন্ডারপাসের নকশা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি তাতে সম্মতি জানান।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মূল ব্যয়ের অর্ধেক টানেলের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হবে।