দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়লেন প্রজ্ঞানন্দ, প্রতিপক্ষ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন
দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (১৮)। খবর সিএনএনের।
সেমিফাইনালে প্রজ্ঞানন্দের প্রতিপক্ষ ছিলেন আমেরিকান গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানা।
মঙ্গলবারের ফাইনালে ভারতীয় সেনসেশনের প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেন। অবশ্য আগেও কার্লসেনকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে প্রজ্ঞানন্দের।
বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছালেন প্রজ্ঞানন্দ।
এ অর্জনে শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন প্রজ্ঞানন্দ। তাকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে গোটা ভারত।
নিউজ এইটিনের খবরে বলা হয়েছে, সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ থেকে ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রজ্ঞানন্দকে।
প্রজ্ঞানন্দের মেধা এবং কৌশলের প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তারকা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারও।
রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে। মূলত বড় বোন বৈশালীকে দেখে প্রজ্ঞানন্দের দাবার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ৬ বছর বয়সে বৈশালী যখন খেলা শুরু করেন, প্রজ্ঞা তখন মাত্র ২ বছরের শিশু।
গত বছর সিএনএন স্পোর্টকে প্রজ্ঞানন্দ বলেছিলেন, "আমি আসলে তাকে গিয়ে বিরক্ত করতাম। এটি দেখে বাবা-মা আমাকে একটি দাবার বই কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যস এভাবেই শুরু।"
পরে ২০১৮ সালে বৈশালী গ্র্যান্ডমাস্টার এবং ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার হন।
'ভারতের দাবা রাজধানী' হিসাবে খ্যাত চেন্নাইয়ে প্রজ্ঞানন্দ নিজের নৈপুণ্যকে ঝালিয়ে নেয়ার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশেষ করে ব্লুম চেস অ্যাকাডেমিতে অনেক কিছু শেখেন তিনি।
ছয় বছর বয়সে, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতার আগে তিনি অনূর্ধ্ব-৭ ইন্ডিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় হয়েছিলেন; এরপর অনূর্ধ্ব-৮ এবং অনূর্ধ্ব-১০ এর হয়ে বিশ্ব যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
তবে ২০১৬ সালে ভারতের ভুবনেশ্বরে কিট আন্তর্জাতিক দাবা ফেস্টিভ্যালে জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন প্রজ্ঞানন্দ।
এই টুর্নামেন্টে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রজ্ঞানন্দ তার আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম অর্জন করেন। অল্প সময়ে প্রজ্ঞানন্দ তিনটি মাস্টার নর্ম পেয়ে যান-যা মাত্র ১০ বছর ১০ মাস ১৯ দিনে তাকে বিশ্বের কনিষ্ঠতম আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টারের সম্মান এনে দেয়।
তবে এতটুকুন বয়সে এতো কিছু জয় করে নিলেও প্রজ্ঞানন্দ থেকেছেন বরাবর বিনয়ী। গত বছর কার্লসেনকে হারানোর পর সিএনএন স্পোর্টকে জানান যে, এখন তার ঘুম বাদে অন্য কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না! আদতেই চেন্নাইয়ের ঘড়িতে তখন সময় ছিল রাত আড়াইটা।
"কেউ কেউ হয়তো আমাকে রোল মডেল হিসেবে দেখে থাকবেন। আমি বলব, আমার কাছে শীর্ষ খেলোয়াড়দের সকলেই রোল মডেল কারণ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই আলাদা কিছু শেখার রয়েছে। আমার কাছ থেকে যদি কেউ কিছু শিখে থাকে, তাহলে সেটিও ভালো", বলে ওঠেন এই চ্যাম্পিয়ন।