বরিশাল মেডিকেলের দুই ছাত্রীকে র্যাগিং, সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) ছাত্রী হলের দুই শিক্ষার্থীকে র্যাগিং ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ (২৬ আগস্ট) শেবাচিমে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ছয় সাংবাদিক হামলার শিকার হন।
জানা যায়, গত বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দুই দফা ডেকে এনে গালাগাল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন একই কলেজের ডেন্টাল ৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন প্রভা এবং ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নীলিমা হোসেন জুঁই।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ওই শিক্ষার্থীরা তাকে ও তার রুমমেটকে গালাগাল দিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। তাদেরকে যেন আর এভাবে মানসিক নির্যাতন করা না হয়, সেজন্য অভিযুক্ত ওই ছাত্রীদের একজন সহপাঠীকে দিয়ে তারা অনুরোধ করান। কিন্তু এতে অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার রাত ১১টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ও তার রুমমেটকে হলের ৬০৬ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে নানানভাবে মানসিক নির্যাতন করেন। এমনকি, এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েও তল্লাশি চালানো হয়।
এর কিছুক্ষণ পর দুই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা নিজেদের রুমে ফেরেন; তাদের মধ্যে আতঙ্কিত এক ছাত্রী বিষয়টি অভিযুক্তদের ওই সহপাঠীকে জানালে তিনি ফোন করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া নেত্রীদের উপর ক্ষোভ দেখান। এতে আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে ৬০৬ নং রুমে ডাকা হয়। এরপর তাকে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল দিয়ে ও নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী অসুস্থবোধ করে তাকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে গভীর রাতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি নিজের রুমে এসে অচেতন হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় সেই রাতেই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের বক্তব্য নেয়। এ সময় সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে অন্তত ছয়জন সাংবাদিক হামলার শিকার হন। অভিযোগ রয়েছে, কলেজের একদল শিক্ষক এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
হামলার শিকার হয়েছেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক কাওছার হোসেন রানা ও ক্যামেরা সাংবাদিক রুহুল আমিন, এশিয়ান টেলিভিশনের সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্যুরো প্রধান মুশফিক সৌরভ ও সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক শাকিল মাহমুদ এবং চিত্র সাংবাদিক সুমন হাসান।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশাল সাংবাদিক মহল। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
হামলার শিকার এশিয়ান টিভির সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা বলেন, "গত পরশু দিন রাতে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। পরে আমরা আজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সংগ্রহে আসি। এক পর্যায়ে জানতে পারি ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকও কলেজে অবস্থান করছেন। পরে অভিভাবকদের কথা শুনতে গেলেই আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।"
হামলার শিকার চ্যানেল ২৪ এর ব্যুরো প্রধান কাওসার হোসেন রানা বলেন, "পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনের সময়ে আমাদের ওপর কলেজের একদল শিক্ষক হামলা চালান। এতে ক্যামেরার ট্রাইপড এবং ক্যামেরা ভেঙে যায়।"
"এছাড়াও চ্যানেল ২৪ এর ক্যামেরা সাংবাদিকসহ সময় টিভির সাংবাদিক ও এশিয়ান টিভির সাংবাদিকসহ কয়েক জনের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, র্যাগিংয়ের ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা শেবাচিমের ভাইস-প্রিন্সিপাল নাজিমুল হক সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাটিকে 'অপ্রত্যাশিত' বলে উল্লেখ করেন এবং পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, "এটি একটি ছোট ঘটনা, গুরুতর কিছু নয়। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।"