যে কারণে নব্বইয়ের দশকে পুতিনের ফিনল্যান্ড সফরের ভিডিও আলোচনায়
পরনে ঢিলেঢালা জ্যাকেট, মাথাভর্তি লম্বা চুল। ঘাসের ওপর টেবিল টেনিস খেলছেন, আবার মাছ শিকারেও গিয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ভ্লাদিমির পুতিনের ফিনল্যান্ড সফরের এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ফিনল্যান্ডের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইএলই।
মে দিবসের ছুটির সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল। পুতিনের বয়স তখন চল্লিশের কাছাকাছি। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির দুর্ধর্ষ অফিসার পুতিন তখন সদ্যই সেন্ট পিটার্সবুর্গের তৎকালীন মেয়র আনাতোলি সোবচাকের উপদেষ্টা নিয়োজিত হয়েছেন। ভিডিওতে সোবচাক এবং পুতিনকে মেয়রের দেহরক্ষীদের বিপক্ষে টেবিল টেনিস খেলতে দেখা যায়। খেলার সময় পুতিনকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়। এসময় বারবার নিজের ঘাড় চুলকাচ্ছিলেন তিনি।
তাদের এই পার্টির পরবর্তী অংশ ছিল পাশের একটি লেকে মাছ শিকার করতে যাওয়া। ভিডিও করা হচ্ছে বুঝতে পেরে পুতিন ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে ছিলেন এবং অন্যরা মাছ ধরা নিয়ে ব্যাপক উল্লাস প্রকাশ করছিলেন।
তারা নৌকায় করে ফিরে আসার পর পুতিনের তৎকালীন স্ত্রী লুদমিলাকে শিকার করা মাছটি পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তাদের দুই কন্যা মারিয়া ও ক্যাটেরিনাকেও ভিডিওতে দেখা গেছে। এছাড়াও, ভিডিও ফুটেজে পুতিনকে ডার্ট ছুঁড়ে মারার খেলায়ও অংশ নিতে দেখা যায়।
ফিনল্যান্ডের কোম্পানি থমেস্তোর একটি করপোরেট অবকাশযাপন ভিলায় ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়। এ কোম্পানিটি রাশিয়া থেকে কাঠ আমদানি করতো। অবকাশযাপন কেন্দ্রটি হেলসিংকি থেকে প্রায় ৬০ মাইল পশ্চিমে রাশবর্গের তরসো দ্বীপে অবস্থিত ছিল।
১৯৯০-এর দশকে পূর্ব জার্মানির দ্রেসদেন শহরে কেজিবির এজেন্ট হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করার পর লেনিনগ্রাদে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবুর্গ) ফিরে যান পুতিন। সেখানে তিনি সোবচাকের দলে যোগ দেন এবং তাকে বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান করা হয়। ওই কমিটির কাজ ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করা।
এই সময়টাতেই পুতিনের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পুতিন দাবি করেন, ১৯৯১ সালের আগস্টে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরে তিনি কেজিবি থেকে পদত্যাগ করেন। তবে ওয়াইএলই সূত্র জানিয়েছে, ফিনল্যান্ড সফরের সময় পুতিন গোয়েন্দা সংস্থাটির হয়ে কাজ করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র পুতিনের তৎকালীন স্ত্রী লুদমিলা পুতিনাকে 'খুবই চমৎকার' একজন মানুষ বলে অভিহিত করেছে। ওই ব্যক্তি আরও যোগ করেন, "আপনি কখনোই পুতিনের খুব ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন না, যেমন- তার সঙ্গে বসে পান করা এবং নারী ও জীবন নিয়ে আলাপ করা ইত্যাদি- এমনটা সম্ভব নয়। অ্যালকোহলের ব্যাপারে তার কড়া নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং তিনি ধূমপান করতেন না।"
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পাথরে নির্মিত ওই ভবনের ভেতরে পুতিনসহ অন্যরা একসঙ্গে বিয়ার এবং ওয়াইন সহযোগে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। এসময় পুতিনকে বেশ আরাম করে খাবার চিবুতে দেখা যায়। মেয়র সোবচাকের সামনে যখন বড় একখণ্ড মাংস রাখা হয়, তখন পুতিন বাজার অর্থনীতি নিয়ে ঠাট্টা করেন।
ওয়াইএলই'র সূত্র অনুযায়ী, রাশবর্গের ওই ভিলায় পুতিন তেমন একটা কথাবার্তা বলেননি। তবে তিনি একটি প্রশ্ন করেছিলেন যে: দেড় মিলিয়ন রাশিয়ান যদি সীমান্ত অতিক্রম করে ফিনল্যান্ডে ঢুকে যায়, তাহলে কী হবে? ওই সময় রাশিয়ায় খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল।
১৯৯০-এর দশকে পুতিন ঘন ঘন ফিনল্যান্ড সফরে যেতেন। তবে পরবর্তীতে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিনের ফিনল্যান্ড সফরে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
ওয়াইএলই জানায়, পুরনো ভিডিওটিতে যে পুতিনের দেখা মিলেছে, বর্তমানে 'নিজেকে ম্যাচো, স্বৈরাচারী প্রতিমূর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা' পুতিনের সঙ্গে তার অনেক পার্থক্য।