বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম নীতির অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে, ওয়াশিংটন দূতাবাসের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি
শ্রম অধিকারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, এ বিষয়টি 'সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকারের সাথে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।'
বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কমার্শিয়াল) মো. সেলিম রেজা কর্তৃক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকার সংক্রান্ত যে স্মারকলিপি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হতে পারে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্ত সে চিঠির একটি অনুলিপি অনুযায়ী, শ্রম অধিকার বিষয়ক মার্কিন এ নীতি আরেকটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
"যদিও 'মেমোরেন্ডাম'টি সমস্ত দেশের জন্য প্রযোজ্য একটি বৈশ্বিক নীতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তবুও বাংলাদেশ যে তাদের করা টার্গেটগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে- এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে," বলা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, "মেমোরেন্ডামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ক ইস্যুগুলো বিশেষভাবে উদ্ধৃত করেছেন সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং অ্যাক্টিং সেক্রেটারি অফ লেবার।"
বিশ্বব্যাপী কর্মীদের ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন ইস্যুতে গত ১৬ নভেম্বর একটি প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম ঘোষণা করেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি এন্টনি জে ব্লিংকেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী ও শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে, হুমকি দেয়, ভয় দেখায় তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
যারা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য বিষয়ক জরিমানা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
মার্কিন মেমোরেন্ডামটি এমন এক সময় ঘোষণা দেওয়া হয় যখন ন্যূনতম মজুরিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের তীব্র বিক্ষোভ চলছিল।
২০২৩ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলারের ওপর পৌঁছায়।
চিঠিতে বলা হয়, "'মেমোরেন্ডাম' অনুসারে, মার্কিন ফরেইন মিশন সরাসরি শ্রম বিষয়ক ইস্যু নিয়ে কাজ করবে। এ নীতিটি আগ্রহী মার্কিন কূটনীতিক বা মিশন অনেক অভ্যন্তরীণ/বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে।"
আরও বলা হয়, "ধারণা করা হচ্ছে, এ নীতি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োগ করার সুযোগ আছে, যদি তারা মনে করে সেখানে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।"
চিঠিতে বলা হয়, "রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে 'মেমোরেন্ডাম' নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মেমোরেন্ডামে শ্রম অধিকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার পিছনে রাজনীতি রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহারের চেষ্টা করবে।"
মেমোরেন্ডামটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি সংকেত বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, 'শ্রম ইস্যুর অজুহাতে' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ নীতির অধীনে যেকোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
"মেমোরেন্ডাম বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে," বলা হয়েছে চিঠিতে।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে কোনো সমস্যা হবে না।
"এটি তাদের [মার্কিন] অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তারা ধনী রাষ্ট্র। আমরা আমাদের বাস্তবতা অনুযায়ী আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করব," গণমাধ্যমকে বলেন মন্ত্রী।