জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেল সবচেয়ে বড় বানর: গবেষণা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুষ্ক ঋতুতে সবচেয়ে বড় এপগুলোর (লেজবিহীন এক প্রকার বানর) পছন্দের ফলমূল পরিবেশ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। আর সম্ভবত এ কারণেই কয়েক লাখ বছর আগে প্রাণিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
জাইগান্টোপিথেকাস ব্ল্যাকি নামের এ প্রজাতিটির বাস ছিল চীনের দক্ষিণাঞ্চলে। এটিকে সবচেয়ে বড় বানর বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। প্রাণিগুলো প্রায় ১০ ফুট লম্বা এবং ওজনে প্রায় ২৯৫ কেজি পর্যন্ত হতো।
শুধু খাদ্যের সংকটই নয়, এদের দৈহিক আকারও বিলুপ্তির একটি কারণ বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং গবেষণাটির সহ-লেখক রেনাউড জোয়ানেস-বয়াউ বলেছেন, 'সত্যিই এটি একটি বিশাল প্রাণি।'
তিনি বলেন, 'যখন খাদ্য দুষ্প্রাপ্য হতে শুরু করে, তখন প্রাণিগুলো নতুন খাদ্য সন্ধানের জন্য ভারি দেহের কারণে গাছেও উঠতে পারত না।'
দৈত্যাকার এ প্রাণিগুলো দেখতে অনেকটাই এখনকার আধুনিক ওরাঙ্গুটানের মতো। চীনের গুয়াংঝি অঞ্চলের বনভূমিতে প্রায় দুই মিলিয়ন বছর ধরে প্রাণিগুলোর বিচরণ ছিল। পরিবেশের পরিবর্তন শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরামিষ খাবার, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের ফল ও ফুল খেয়ে বেঁচে ছিল।
গবেষকরা গুয়াংঝির বিভিন্ন গুহায় সংরক্ষিত পরাগ ও পলির নমুনাসহ জীবাশ্ম দাঁতগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা ছয় লাখ বছর আগে এই অঞ্চলে শুষ্ক ঋতুতে কীভাবে বিভিন্ন ফল ও ফুলের উৎপাদন কমতে শুরু করেছিল তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, বিশাল দেহের এই প্রাণিগুলো সম্ভবত দুই লাখ ১৫ হাজার থেকে দুই লাখ ৯৫ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছিল।
তারা জানান, ছোট দেহের বানরগুলো খাবারের সন্ধানে গাছে চড়তে পারত। কিন্তু দৈত্যাকার বানরগুলো তা পারত না। তাই তারা বাধ্য হয়ে গাছের ছাল, নল ও অন্যান্য অপুষ্টিকর খাবার বেশি খেয়েছিল।
গবেষণাটির আরেক সহ-লেখক ঝাং ইংকি বলেন, 'যখন বনের পরিবেশ পাল্টে গিয়েছিল, তখন এ প্রজাতির পছন্দের পর্যাপ্ত খাবার ছিল না।'
প্রাণিগুলোর জীবাশ্ম দাঁত এবং নিচের চোয়ালের চারটি বড় বড় হাড়ের ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা প্রাণিগুলো সম্পর্কে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। এসব হাড় ও জীবাশ্মের সবগুলোই পাওয়া গেছে চীনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে।
দুই মিলিয়ন থেকে ২২ মিলিয়ন বছর আগে কয়েক ডজন প্রজাতির বৃহৎ দেহের এসব প্রাণি আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় বসবাস করত। এখন শুধু গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বোনোবোস ও ওরাঙ্গুটান দেখা যায়।