সৌদির প্রথম মদের দোকান কি দীর্ঘদিনের মদ চোরাচালান মোকাবেলার জন্যই খোলা হয়েছে!
প্রথমবারের মতো রাজধানী রিয়াদে মদের দোকান খুলেছে সৌদি আরব। সেখানকার কূটনৈতিক আবাসনে বসবাসকারী অ-মুসলিম কূটনীতিকরা এই সুবিধা নিতে পারবেন বলে জানা গেছে।
যদিও এটি শুধু একটি নির্বাচিত গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে, এটি অত্যন্ত রক্ষণশীল এই মুসলিম দেশটির জন্য একটি বড় পরিবর্তন। একজন সৌদি যুবরাজ মাতাল হয়ে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিককে হত্যা করার পর ১৯৫২ সাল থেকে দেশটিতে মদ নিষিদ্ধ করা হয়। ইসলাম ধর্মেও মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং সৌদি আরবের স্থানীয় জনসংখ্যার অধিকাংশই ধর্মীয়ভাবে এই রীতি পালন করে।
কিন্তু এর ফলেও বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে মদ আনা-নেওয়া বন্ধ হয়নি কারণ গোপনে এটি হয়ে আসছে।
বিদেশি দূতাবাসগুলি সৌদি সরকারের সাথে নির্দিষ্ট চুক্তির অধীনে মদ আমদানি করতে সক্ষম। আবার কেউ কেউ নিরাপদ 'কূটনৈতিক বলয়ে' দেশটিতে মদ্যপান করেছে যেটি পরিদর্শন করা সম্ভবও ছিল না।
দেশটির প্রবাসী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এখান থেকেই বোতলগুলি প্রায়শই কালো বাজারে অনেক দামে বিক্রি করা হয়। যদিও বিষয়টির সংবেদনশীলতার জন্য কেউই তাদের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং রিয়াদের একজন সৌদি বিনিয়োগকারী সিএনবিসিকে বলেছেন, "সবাই জানে কোন দূতাবাসে মদ বিক্রি হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এর থেকে আলাদা ব্যবসা করছে। কালোবাজারে বিক্রি করছে সাধারণ দামের থেকে চার, পাঁচ এমনকি দশগুণ বেশী দামে। এটা হাস্যকর হয়ে গেছে। সরকারকে এর জন্য কিছু একটা করতেই হতো।"
রিয়াদের নতুন দোকানটিতে কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছে। দোকানটি থেকে মদ কিনতে গ্রাহকদেরকে ডিপ্লো নামক একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স কোড নিতে হবে এবং মাসিক কোটা মেনে চলেই মদ কিনতে হবে।
একজন সৌদি কনসালট্যান্ট বলেছেন, নতুন এই ক্রয় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে "চোরাচালান সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য যা সবসময় আমাদের কূটনীতিকদের সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে।"
দেশটির সেন্টার অফ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন (সিআইসি) সিএনএনের বরাত নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদি সরকার দেশটিতে কূটনৈতিকদের জন্য মদের কোটা নিয়ন্ত্রণ করছে "মদের অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।"
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিআইসি এই ব্যাপারে সিএনবিসিকে তথ্য দেওয়ার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
সৌদি আরবে যারা মদ্যপান বা বিক্রি করে ধরা পড়ে তাদের জন্য জরিমানা, দোররা, নির্বাসন এবং জেলের মত কঠোর শাস্তি আরোপ করা হয়।
তবুও দেশটির অনেকেই বলছে, কূটনৈতিক স্থানের বাইরে মদ্যপানের বৈধতা কেবল সময়ের ব্যাপার যদিও এটি সম্ভবত হোটেল বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং মুসলমানদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে। রিয়াদ এবং জেদ্দার বেশ কিছু উচ্চমানের রেস্তোরাঁয় ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ সজ্জিত বার রয়েছে যাতে বর্তমানে নন-অ্যালকোহলিক মকটেল তৈরি করা হয়।
বর্তমানে দেশটিতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি আরবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই বিশাল পরিবর্তন হয়েছে।
তাঁর 'ভিশন ২০৩০' এর মাধ্যমে তিনি উপসাগরীয় দেশটির ভাবমূর্তি পুনর্নির্মাণ, পর্যটনকে আকৃষ্ট করা এবং তেল থেকে দূরে সরে দেশটিতে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময়তা তৈরি করার জন্য শত কোটি ডলারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়াও এই ভিশনের লক্ষ্য হল, ক্রমবর্ধমান সৌদি যুব জনসংখ্যার জন্য নতুন চাকরি তৈরি করা যার ৭০ শতাংশের বয়স ৩০ এর নিচে।
যুবরাজ সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকটি উদার সংস্কার বাস্তবায়িত হয়েছে যেমন মহিলাদের গাড়ি চালানো, সিনেমা থিয়েটার এবং সঙ্গীত উৎসবের মতো অতীতে নিষিদ্ধ জিনিসগুলিকে অনুমতি দেওয়া।
কিন্তু সৌদি আরবে মদ একটি নিষিদ্ধ বিষয়। দেশটির বর্তমান নেতৃত্ব এই নিয়মকে আধুনিকায়ন করে পর্যটন বাড়ানোর পাশাপাশি আরো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনতে চায়। কিন্তু দেশটিকে তার অভ্যন্তরীণ জনসংখ্যাকেও ক্ষুব্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে যেহেতু তাদের বেশিরভাগই ধর্মীয়ভাবে মদের বিরুদ্ধে।