রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য-প্রমাণ চাওয়া হয়েছে ফেসবুকের কাছে
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির একটি আদালতে চলতি বছরের ৮ জুন একটি অনুসন্ধানী দরখাস্ত করে গাম্বিয়া। যার আওতায় রোহিঙ্গা গণহত্যায় মদতদাতা বলে পরিচিত মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজের তথ্য যেন ফেসবুক সরবরাহ করে, সেই সংক্রান্ত আদেশ জারিতে মার্কিন আদালতটিকে অনুরোধ করেছে দেশটি।
গাম্বিয়া মিয়ানমারের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যেসব ব্যক্তিগত তথ্য চেয়েছে, তা নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনীত গাম্বিয়ার গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে সহায়তা করবে।
সাম্প্রতিক এ দরখাস্তের আওতায়, 'রোহিঙ্গা গণহত্যা চলাকালে সামাজিক গণমাধ্যমটিতে মিয়ানমারের কর্মকর্তা এবং সরকারের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেসব ঘৃণামূলক প্রচারণা ছড়িয়েছেন, তার রেকর্ড হস্তান্তর করার দাবি করা হয়েছে। শুধু সহিংসতাকে উস্কে দেওয়া নয়, বরং এসব প্রচারণার মাধ্যমে দেশটির জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা; মাঠ পর্যায়ের সৈনিক এবং সশস্ত্র বেসামরিক দাঙ্গাবাজদের গণহত্যার দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে গাম্বিয়া। এসব প্রমাণ যদি ফেসবুক হস্তান্তর করে তাহলে গণহত্যার সমর্থন এবং দায়িত্ব প্রমাণে উল্লেখযোগ্য সাহায্য মিলবে বলেও জানানো হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে আরেকটি বিষয় নতুন করে উঠে আসে। তা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নির্মূলে ফেসবুককেই প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘিরে বানোয়াট, বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কেন্দ্রেই ছিল ফেসবুক।
এ ব্যাপারে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে এর আগে ফেসবুকের নিজস্ব এক প্রতিবেদনেই বিষয়টি স্বীকার করা হয়। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত না করেই প্রতিবেদনটি জানায়, 'মিয়ানমারের কিছু অসৎ ব্যক্তি ঘৃণা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করেছে। এর ফলে সহিংসতা বাড়ে এবং হামলাকারীরা সুসংবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়।'
জাতিসংঘের গণহত্যা তদন্তকারী মিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, একমাত্র রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য করেই এসব প্রচারণা ছড়ানো হয়, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে খুবই বিকৃত এবং বিদ্বেষী।
''রোহিঙ্গাদের অসভ্য, জংলি, বর্মী বিরোধী, বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষী, অবৈধ অভিবাসী এবং সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা পোস্ট মিয়ানমারের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।''
এ অবস্থায় মার্কিন আদালতে করা দরখাস্তে আরও বলা হয়, "ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয় নিয়ে বিরূপ পোস্ট করতে থাকে। এসব প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল; রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণা এবং অনাস্থা উস্কে দেওয়া।
রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই গণহত্যায় ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়, এ প্রেক্ষিতে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র-জেনারেল মিন অং হ্লিয়াংসহ আরও শীর্ষ ১৯ সামরিক কর্মকর্তা এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিষিদ্ধ করে ফেসবুক। তাদের পোস্ট করা কন্টেটগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়। তবে রেকর্ডের স্বার্থেই এখনও ফেসবুকের সার্ভারে এগুলোর তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
গাম্বিয়ার দরখাস্তে বলা হয় ''এসব পেজ এবং প্রোফাইলের তথ্য সহজলভ্য করা হলে, তাতে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ের বিচারিক কর্তৃপক্ষ এসবের ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করতে পারবেন।''
গাম্বিয়ার এই আপিল এখন চলমান আছে। আর পৃথিবী অপেক্ষা করছে ফেসবুকের দিকে তাকিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী প্রচারণায় মদত দেওয়া, ইসরাইলে ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মীদের প্রচারণা বন্ধ করা; বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক গণমাধ্যমটি কি এখন রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রমাণ দিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসবে? নাকি দোষীদের আড়াল করতে বরাবরের মতোই অস্পষ্ট অবস্থান অবলম্বন করবে, এ প্রশ্নটি এখন মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।