'স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে ৪০ বছরই মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয়নি'
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত ওয়েবইনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এই মত দেন।
বাংলাদেশে চিকিৎসা বর্জ্য নিরাপদ নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা শীর্ষক ওয়েবইনারটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট জিয়া উদ্দিন হায়দার। আলোচক হিসেবে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ, প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার আনিসুর রহমান এবং সাংবাদিক ও চিকিৎসক নূরুল ইসলাম হাসিব।
চিকিৎসা বর্জ্য যে ঝুঁকি বাড়ায় এবং এটাকে আলাদা করে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, সেটা সবাই জানেন ও বোঝেন মন্তব্য করে খোন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে একটি আইন পেলেও সেটা অসম্পূর্ণ আইন। ২০১৩ সালে আমরা একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে, অথচ আজ পর্যন্ত একটি মিটিং হয়নি। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে দাবি করছি, কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের যেখানে পৌঁছানোর কথা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি।
তিনি বলেন, আইন থাকলেই হবে না। আমাদের ফ্যাসিলিটিস নাই। চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা ২০০৮ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে। অথচ হাসপাতালের অনুমোদন দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ করা হয়নি। অনেক সিটি করপোরেশনের জায়গা নাই। সাভার-নারায়ণগঞ্জে রাস্তার দুধারে বর্জ্য ফেলে রাখা হয়। গাজীপুরেরও একই অবস্থা।
খোন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হয়নি, এটা বলা যাবে না। তবে পুরোপুরি হচ্ছে না। কারণ, ক্লিনার পদে যারা কাজ করে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, বেতন সামান্য। এখন পর্যন্ত আমরা সলিড ওয়েস্ট ডাম্প করছি। হিউজ লিকুইড ওয়েস্ট কিন্তু তৈরি হচ্ছে, তাই হাসপাতালগুলোর ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে। হাসপাতাল থেকে লিকুইড ওয়েস্ট সরাসরি ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। সেটা যাচ্ছে ওপেন ওয়াটারে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা অনেক ভালো কাজ করেছি। কিন্তু স্বাধানীতার ৫০ বছরের মধ্যে ৪০ বছরে চিকিৎসা বর্জ্য নিয়ে কথা বলিনি; আবার যেটুকু কথা হয়েছে তাতে অগ্রগতি এখনো তেমন হয়নি। এমবিবিএস কারিকুলামে আন্ডার গ্রাজুয়েটে যদি পড়ানো হতো, তাহলে চিকিৎসক হবার আগেই একজন শিক্ষার্থী চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝত। নার্স এবং মিডওয়াইফ কারিকুলামেও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল। আমরা তা করছি না। পাস করে আসার পরে আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, হাসপাতালে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট টিম আছে, সেখানেও মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন সহযোগী ও গণমাধ্যমকে সাথে কাজ করতে পারলে পুরো সিস্টেম দাঁড় করানো সম্ভব। ওয়ানস ইওর থিংকস আর নট ট্রান্সলেটেড ইনটু অ্যাকশন, দ্য নলেজ ইজ নট অ্যা নলেজ। আইন থেকে লাভ হবে না যদি না তার প্রয়োগ না থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিরিঞ্জ যদি আমরা ঠিক মতো ডিসপোজ করতে পারতাম, তাহলে হেপাটাইটিস বি কিংবা সি এভাবে বাড়ার কথা না; একটু মনিটরিং বাড়ালেই এটা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, প্রকাশ করেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও। ডাক্তার এবং নার্সের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি বড় বিষয়। এক হাজারের উপরে ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন, একশোর বেশি ডাক্তার মারা গেছেন, মারা গেছেন অসংখ্য নার্স। যার অন্যতম কারণ, ইনফেকশন পিভেনশন কন্ট্রোল ঠিকমতো মেইনটেইন করিনি। এর সঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্যের সম্পর্ক আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কীভাবে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস পরতে এবং ডিসপোজ করতে হবে, কোথাও মানা হচ্ছে, কোথাও মানা হচ্ছে।
নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, করোনা সময় আমরা দেখলাম বাসা-বাড়ি থেকে যারা আবর্জনা নেন, তারা মাস্ক নিচ্ছেন না। কারণ তাদের কাছে সেই নির্দেশনা ছিল না যে বাসা-বাড়ি থেকে এ ধরনের বর্জ্য আসতে পারে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস করা না হলে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হবে না।