বাইডেনের অভিবাসী বৈধকরণের নতুন উদ্যোগে যে-সব শর্ত আছে, যা হতে পারে
অভিবাসীদের আশ্রয়ণ নিয়ে কিছুদিন আগেও কঠোর অবস্থানে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু এ সপ্তাহে তার সিদ্ধান্ত নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন নাগরিকদের অনিবন্ধিত স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের প্রত্যাবাসন থেকে রক্ষা করার নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
বাইডেনের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পালন সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীরা দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতির আবেদন করতে পারবেন। এভাবে এক সময় তারা মার্কিন নাগরিকত্বও পেয়ে যাবেন।
জেনে নেওয়া যাক বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য এ নীতিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কত মানুষ এ নীতির আওতায় আসবেন?
হোয়াইট হাউজের অনুমান, প্রায় পাঁচ লাখ বিবাহিত ব্যক্তি — যারা কোনো মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু অনিবন্ধিত — তারা এ নিয়মের সুবিধাভোগী হবেন। এছাড়া যেসব অভিবাসী সন্তানের মা অথবা বাবা একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে যুক্ত, তারাও এ সুবিধা পাবেন। মার্কিন নাগরিকদের এ ধরনের সৎ-সন্তানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেছেন এবং তারপর সেখানে তাদের অবস্থানের সময় বাড়িয়েছেন, তাদের জন্য বাইডেনের এ প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ নেই।
পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে আর কোনো শর্ত?
নতুন এ উদ্যোগের সুবিধা নিতে হলে আবেদনকারী অভিবাসীকে অবশ্যই ২০২৪ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০ বছর বাস করতে হবে এবং এ তারিখের মাঝেই কোনো মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বৈধভাবে বিবাহবন্ধনে থাকতে হবে।
অর্থাৎ কোনো অভিবাসীর সঙ্গে কোনো মার্কিন নাগরিকের ১৮ জুন বিয়ে হলে ওই অভিবাসী এ সুবিধা পাবেন না, কিন্তু কেউ ১৫ জুন বিয়ে করলে তারা সুবিধাপ্রাপ্তির উপযোগী হবেন না। কারণ কতদিন ধরে ওই দম্পতি বিবাহিত জীবন যাপন করছেন, তা বিবেচনায় রাখছে না বাইডেন প্রশাসন।
ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) জানিয়েছে, আগ্রহী আবেদনকারীর অপরাধের রেকর্ড থাকলে তিনি প্রোগ্রামে আবেদনের অনুপযুক্ত হতে পারেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে পরিগণিত হলেও আবেদন করা যাবে না।
'ড্রিমার'দের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে এটি?
তথাকথিত 'ড্রিমার্স', অর্থাৎ যাদেরকে শিশুকালে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়েছে এবং যারা মার্কিন নাগরিকদের সৎ-সন্তান, তাদের ওপরও কার্যকর হবে বাইডেন প্রশাসনের এ নীতি। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজের অনুমতি পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এ ব্যক্তিদেরকে অবশ্যই ২১ বছরের কম বয়সি ও অবিবাহিত হতে হবে। এবং তাদের মা অথবা বাবার [যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে] বিয়ের সময়ে তাদের বয়স ১৮-এর নিচে থাকতে হবে।
অনিবন্ধিত ব্যক্তিদের জন্য আগের নিয়ম কী ছিল?
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ হওয়ার আবেদন করতে হলে প্রথমে দেশটি ছেড়ে যেতে হয়। তাই অনেকেই এ পথে যেতে চান না।
যুক্তরাষ্ট্রে কেউ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশ করলে এবং এক বছরের বেশি দেশটিতে অবস্থান করার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের জন্য ওই ব্যাক্তিকে আগে এক দশকের জন্য আমেরিকা ছেড়ে যেতে হয়।
অন্য দেশে অবস্থানের এই ১০ বছর সময় কমানোর আবেদন করা যায়। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে এ ক্ষেত্রে অনেক অনিশ্চয়তাও থেকে যায়।
১০ বছরের এ সাময়িক প্রত্যাবাসন থেকে বাঁচার উপায় কেবল মানবিক বিবেচনা ব্যবহার করে অভিবাসনের আবেদন করা। এক্ষেত্রে মানবপাচারের শিকার হলে টি ভিসা এবং সহিংসতার শিকার বা যৌবনে গৃহহীন হলে ইউ ভিসা পাওয়া যায়।
কিন্তু এসব ভিসা পাওয়ার শর্তগুলোও বেশ কড়া এবং প্রতিবছর অল্পসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে বৈধ হতে পারেন।
এবার কী হবে?
নতুন এ প্রোগ্রামের আওতায় আবেদনকারীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এক দশক অবস্থান করতে হবে না। দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপযুক্ত আবেদনসমূহের অনুমোদন দেবে। আবেদনকারীদেরকে স্থায়ী বসবাস বা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে তিন বছর সময় দেওয়া হবে।
এ তিন বছর আবেদনকারীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে বাস করতে পারবেন এবং এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে পারবেন।
আবেদন কখন জমা দেওয়া যাবে?
ফেডারেল রেজিস্টার এখনো আবেদন শুরুর তারিখ ঘোষণা করেনি। এছাড়া আবেদনের খরচ, কী কী নথিপত্র লাগবে সে-সব তথ্যও এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, 'সামারের শেষ থেকে' আবেদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
যেভাবে নিতে হবে প্রস্তুতি
সম্ভাব্য আবেদনকারীরা কিছু কাগজপত্র চাইলে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে পারেন। অনিবন্ধিত স্বামী বা স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে গত ১০ বছর বসবাস করছেন তার প্রমাণ, ১৭ জুনের আগে বিয়ে হওয়ার প্রমাণ — এ ধরনের কাগজপত্র এখন থেকেই জোগাড় করা যেতে পারে।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় থাকলে আবেদন সম্ভব?
কেউ যদি এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মাঝে থাকেন, তাহলে তিনিও নতুন এ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু কারও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব ন্যাশনাল সিকিউরিটির ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের গাইডলাইন অনুযায়ী অগ্রাধিকার [প্রায়োরিটি কেস] তালিকায় থাকে, তাহলে তিনি এ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন না।