বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ: অভিবাসী কমাতে স্টুডেন্ট ভিসা ফি দ্বিগুণ করল অস্ট্রেলিয়া
বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য অনেক দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকাতেই শীর্ষে থাকে অস্ট্রেলিয়া। সেইসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ দিল দেশটি।
এক ধাক্কায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সোমবার (১ জুলাই) এ ঘোষণা দেয় দেশটি। এতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে গেল।
প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ উচ্চশিক্ষা ও কাজের উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায়। ফলে দিন দিন দেশটির জনসংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। মূলত রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসনের লাগাম টানতে এবং এর জেরে দিন দিন আবাসন বাজারের ওপর চাপ তীব্র হতে থাকায় স্টুডেন্ট ভিসা ফি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।
১ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফি ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১ হাজার ৬৮ মার্কিন ডলার) করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এছাড়া ভিজিটর ভিসা এবং অস্থায়ী গ্র্যাজুয়েট ভিসা আছে, এমন শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত অবস্থায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আজ কার্যকর হওয়া পরিবর্তনগুলো আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরও সুন্দর, ক্ষুদ্রতর ও ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে সাহায্য করবে।'
এ জন্য আবারও শিক্ষার্থী ভিসার (স্টুডেন্ট ভিসা) নিয়মে পরিবর্তন আনছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। গতকাল বুধবার (৮ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সঞ্চয়ের পরিমাণ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা পেতে অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। বুধবার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, ভিসা পেতে শিক্ষার্থীদের এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জমা দেখাতে হবে। আগে ২৪ হাজার ৫০৫ অস্ট্রেলীয় ডলার ব্যাংক ব্যালান্স দেখাতে হতো। গত সাত মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ন্যূনতম ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ দ্বিতীয়বারের মতো বাড়ল।
চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত অফিশিয়াল তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় নিট অভিবাসন ৬০ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
ফি বাড়ানোর ফলে অস্ট্রেলিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি খরচ হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি যথাক্রমে ১৮৫ ও ১১০ মার্কিন ডলার।
অস্ট্রেলিয়া সরকার বলেছে, ভিসা আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতেও কাজ করছে তারা। আইনের এসব দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সময়সীমা বাড়িয়ে নিতেন। ২০২২-২৩ সালে দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপরে উঠে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।
২০২২ সালে কোভিড-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বার্ষিক অভিবাসনের রেকর্ড হয়েছে। এতে দেশটিতে বাসাভাড়া অনেক বেড়ে যায়। সরকারের ওপর চাপ বাড়ে। এরপরই অভিবাসীদের ঠেকাতে গত বছরে থেকে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়মগুলোকে কঠোর করার উদ্যোগ নেয় দেশটি।
এ বছরের মার্চে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেওয়া হয়। মার্চে অস্ট্রেলিয়া সরকার জানায়, স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে এখন থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে আরও বেশি রেটিং পেতে হবে। কয়েকটি কলেজকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে প্রতারণামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশও দেওয়া হয়।
এছাড়া মে মাসে নিয়ম করা হয়, ভিসা পেতে শিক্ষার্থীদের এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অন্তত ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জমা দেখাতে হবে। আগে ২৪ হাজার ৫০৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যাংক ব্যালান্স দেখাতে হতো। সাত মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ন্যূনতম ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ দ্বিতীয়বারের মতো বাড়ে তখন।
তবে আয়ের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে এ উদ্যোগ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনীকেই। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়ার এ খাতের বাজারমূল্য ছিল ৩৬.৪ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।