১৪ দিন পর বিকল্প নৌরুটে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন্স গেল ৩ নৌযান
মিয়ানমারের সংঘাতের জেরে টানা ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার বিকল্প নৌরুটে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে তিনটি ট্রলার সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে পৌঁছেছে। অন্যদিকে দ্বীপটি থেকে তিনটি ট্রলার ও তিনটি স্পিডবোট টেকনাফে পৌঁছেছে।
এর মধ্যে দিয়ে বিকল্প এই রুটটিতে নৌযান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, 'এখন পর্যন্ত বিকল্প রুটে ছয়টি সার্ভিস ট্রলার ও তিনটি স্পিডবোট চলাচল করেছে। আশা করছি এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে আমরা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প নৌরুটে নৌযান চলাচল করতে বলা হয়েছে।'
সেন্ট মার্টিন্স সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেন্ট মার্টিন্স জেটি থেকে তিনটি সার্ভিস ট্রলার এসবি সুমাইয়া, এসবি আল্লাহর দান, এসবি আল-নোমান দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুপুর ১২ টার দিকে নৌযানগুলো শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছে।
আর ২৫জন যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিন্স থেকে শহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছে তিনটি স্পিডবোট ।
অন্যদিকে সকাল ১১ টায় টেকনাফ থেকে এসবি আবরার হাফিজ, এসবি ওসমান গণি, এসবি রাফিয়া নামের তিনটি ট্রলার শতাধিক যাত্রী, দুই শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার, চাল, ডালসহ কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুপুর ২টার পর নৌযানগুলো দ্বীপের জেটিতে পৌঁছে।
আবদুর রশিদ আরও জানান, জুন-জুলাই মাসে সাগর বেশি উত্তাল থাকে। এ সময়ে সাগরে যাওয়া নিষেধ আছে। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই আজ বিকল্প পথে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের মধ্যে নৌযান চলাচল করেছে।
সেন্ট মার্টিন্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মিয়ানমারের সংঘাতের জেরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন্স নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প পথে নৌযান চলা শুরু হলেও উত্তাল সাগর ও আবহাওয়াজনিত কারণে বিকল্প পথটিও বন্ধ হয়ে যায়। ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর আজ বিকল্প পথে নৌযান চলাচল শুরু হলো।
তিনি আরও জানান, আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তর হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করত। মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তর হয়ে চলাচল করছে। একই সঙ্গে প্রতিটি নৌযানে উঁচু করে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়েছে।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে গত ১ জুন বিকেলে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন্সের উদ্দেশে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ যাত্রীর এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এছাড়া গত ৫ জুন সেন্ট মার্টিন্সের স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোটগ্রহণ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে একই পয়েন্টে ফের গুলি করা হয়।
গত ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়।
প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে। গুলিবর্ষণের এসব ঘটনায় হতাহতের না হলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
পরে ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন্সে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২২ জুনের পর থেকে সেটিও বন্ধ রাখা হয়।