৫ শতাংশ কোটা যৌক্তিক বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা, দাবি পূরণে কমিশনের প্রস্তাব
কেবল প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দাবি পূরণে একটি কমিশনের প্রস্তাব করেছেন তারা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করছি না। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের কোটা ও পৌষ্য কোটাকে আমরা অযৌক্তিক মনে করছি।'
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আন্দোলনকারীদের দাবি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কাছে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'যেহেতু আমাদের দাবি সকল গ্রেডের প্রেক্ষিতে, সেহেতু বিষয়টি আদালতের চলমান মামলায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়।'
'আমাদের আন্দোলন কোটা বাতিলের নয় বরং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোটা সংস্কার করা। এজন্য একটি কমিশন গঠন করে আমাদের দাবি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা সাধুবাদ জানাব,' বলেন তিনি।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বর্তমান অবস্থায় 'আন্দোলন আদালতের প্রেক্ষাপটে নেই' বললেও আন্দোলনের সমন্বয়কেরা জানিয়েছেন, তারা বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাদেশে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয়কেরা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'সকাল ১০টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগসহ রাজধানীর সকল মোড় অবরোধ করবেন।'
এ অবরোধ কর্মসূচির আওতায় সড়ক ও রেলপথ অন্তর্ভুক্ত হবে জানিয়ে তিনি দেশের সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনসাধারণের প্রতি কর্মসূচি পালনের আহবান জানান।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়ার পর থেকেই সেটি সমালোচনার শিকার হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীসময়ে রায় স্থগিত চেয়ে ৯ জুন আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।