৪০ শতাংশ উন্মুক্ত জায়গা রেখে হাজারীবাগকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রাজউকের
ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার পুনর্গঠন করতে একটি ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড গ্রিন অ্যাকশন প্ল্যান (সিআরজিএপি) তৈরি করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ পরিকল্পনার আওতায় হাজারীবাগে ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান থাকবে। পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকা সংস্কারের পরিকল্পনাও তৈরি করেছে সংস্থাটি।
অ্যাকশন প্ল্যানে রাজউক হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার জন্য ১২টি ব্লকের প্রস্তাব করেছে। ২০১৮ সালে এখানকার ট্যানারিগুলো স্থানান্তরের পরে একটি সরকারি আদেশের কারণে জমিগুলো অব্যবহৃত পড়ে ছিল। এরপর জমির মালিকরা সেখানে নতুন স্থাপনা নির্মাণের দাবি জানান।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবনিদ মো. আশরাফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন তারা [ট্যানারি এলাকার জমি মালিকেরা] ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের বাধ্যবাধকতা মেনে হাজারীবাগে নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারবেন। সেখানে তাদের অবশ্যই ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত ও সবুজ স্থান রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, পুরান ঢাকাকে নতুন করে গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। কিন্তু ট্যানারির কারণে হাজারীবাগে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
রাজউক নিশ্চিত করেছে, পুরান ঢাকার মানুষ যদি ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের আওতায় তাদের ভবন নির্মাণ করেন, তাহলে তারা নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ডিএপি) ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) প্রণোদনার সুবিধা পাবেন।
এদিকে হাজারীবাগ ও লালবাগের জন্য রাজউক ও ডয়চে গেজেলশফট ফার ইন্টারন্যাশনাল জুসামেনারবেইট-এর (জিআইজেড) প্রস্তুত করা ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড গ্রিন অ্যাকশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ড্যাপে (২০২২-২০৩৫) এই এলাকাগুলোকে ঢাকা রিজেনারেশন এলাকা হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ড্যাপে (২০১০-২০২২) এ এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল আরও বলেন, আগে পুরান ঢাকার মানুষ রূপান্তর পরিকল্পনায় রাজি হতে চাইত না। 'তবে এখন ট্যানারির মালিকসহ পুরান ঢাকার বাসিন্দারা অনেকেই বুঝতে পেরেছেন এবং আমাদের সাথে উন্নয়নে আসতে আগ্রহী।'
পরিকল্পনার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, হাজারিবাগ ট্যানারি এলাকায় যেকোনো নতুন ভবন করতে হলে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনা মেনেই করতে হবে এবং নির্ধারিত ৬০-৪০ ফুট রাস্তা রাখতেই হবে। অথবা তারা রাজউকের সঙ্গে অংশীদারত্বেও নতুন ভবন নির্মাণ করার সুযোগ পাবেন।
আশরাফুল বলেন, 'হাজারিবাগের ট্যানারি এলাকাকে ১২টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে এবং সেখানে এই ব্লক অনুযায়ীই উন্নয়ন করতে হবে।'
লালবাগের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার মূল পরিকল্পনা করা হয়েছে। 'এদিকে, বেশ কিছু সড়কের প্রস্থ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া যেসব রাস্তার প্রস্থ বাড়ানো সম্ভব নয়, সেগুলোকে শুধু হাঁটার রাস্তা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।'
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, 'লালবাগের আশপাশে যে হেরিটেজ সাইটগুলো আছে, এগুলো সংরক্ষণ করতে বলেছি আমরা। সাথে সাথে এর মাঝে মাঝে কিছু পকেট খাস জমি আছে, সেগুলোকে পাবলিক স্পেস তৈরি করতে প্ল্যান দেওয়া হয়েছে।
'এরই সাথে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় উন্নয়নের জন্য আমাদের প্ল্যানে বলা আছে।'
অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের মূল স্টেকহোল্ডার হলো রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় বাসিন্দারা, ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ঢাকা জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মূল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে আর্থিক সহায়তা ও জিআইজেডের প্রযুক্তিগত সহায়তায় পরিকল্পনাটি করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল (১১ জুলাই) রাজউক মিলনায়তনে হাজারীবাগ ও লালবাগের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় পরিকল্পনার টিম লিডার ও ত্রয়ী অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মো. ফজলে রেজা সুমন বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারির অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য আশেপাশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর। ১১৩ একর এলাকার মাটিতে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্রোমিয়াম জমা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এই এলাকার বায়ু দূষণের প্রভাব পুরোপুরি কেটে যেতে সময় লাগবে। [ট্যানারি এলাকা থেকে] ক্রমান্বয়ে মাটি অপসারণেরও উদ্যোগ নিতে হবে।'
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকা এবং ঐতিহ্যবাহী লালবাগ এলাকার জন্য যে ব্লকভিত্তিক সমাধান প্রণয়ন করা হয়েছে, তা টেকসই সমাধানের জন্য সহায়ক হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকাওয়াত উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, '২০১৮ সালে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে আমরা হাজারীবাগের জমি ব্যবহার করতে পারছি না, ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারছি না। এখন যেহেতু রাজউক একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে, তাই আমরা চাই হাজারীবাগের উন্নয়ন দ্রুত শুরু হোক।'
তিনি বলেন, হাজারীবাগে ৬১ একর জমির মালিক ২২৩ ট্যানারি মালিক। 'রাজউক যদি এই এলাকায় ভবন নির্মাণে এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের খুব উপকার হবে। বর্তমানে সব ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত।'