৬ ঘণ্টার তুমুল বর্ষণে ‘ডুবল’ ঢাকা, সময় নিয়ে বেরোতে বলল ডিএমপি
শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টিতে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান পানি জমে গেছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আর বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষও পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
আজ সকাল ছয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ দেশের সর্বত্রই বৃষ্টি হয়েছে। এমন বৃষ্টি চলতে পারে আজ প্রায় সারা দিন। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টি একটু কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় ২৪ ঘন্টায় ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়। তবে অল্প সময়ে এতো ভারি বৃষ্টিপাত সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি।'
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ডুবে গিয়ে রাস্তাতেই অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে। এজন্য রাজধানীবাসীকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
ডিএমপি জানিয়েছে, যেসব এলাকায় প্রবল যানজট সৃষ্টি হয়েছে, সেই এলাকাগুলো হলো: ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্যভবন, কাওরান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড ও মিরপুর মাজার রোড।
প্রাইভেট কার চালক শাহ আলম জানান, সকাল ৭টার দিকে তিনি মৌচাকের বাসা থেকে গুলশানে যাওয়ার জন্য বের হন। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে মৌচাকের একটি গলিতে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে ছিলেন।
শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকা ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হচ্ছে। নিচু এলাকাগুলো হালকা বৃষ্টির পরেই তলিয়ে যায়।
বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট তীব্র জলাবদ্ধতায় চরম বিপাকে পড়েছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
ছুটির দিন শুক্রবার এমনিতেই যানবাহন কম থাকে, তার ওপরে বৃষ্টিতে আরেকটু কমে গেছে যানবাহন। এতে ভিজে ভিজেই গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে।
বৃষ্টিতে বেশি বিপাকে পড়েছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টা থেকে, কিন্তু ঝুম বৃষ্টির কারণে অনেকেই সময়মতো বাসা থেকে বের হতে পারেননি। এছাড়া রাস্তায় তেমন একটা বাস চলাচল না করায় তাদের ঝামেলা বেড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির পানি সরাতে কাজ করছে ঢাকা উত্তরের ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যে প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। অল্প সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি অপসারণ হতে কিছুটা সময় লেগেছে। এখনো যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে কুইক রেসপন্স টিম পাঠিয়ে সেইসব অঞ্চলের ড্রেন পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
কোথাও কোনো পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬ নম্বরে ফোন করে জানালে কুইক রেসপন্স টিম ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।