মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৭ হাজার শ্রমিককে কেন সুদসহ টাকা ফেরত নয়: হাইকোর্ট
ভিসা পাওয়ার পরও প্লেনের টিকেট না পাওয়ায় সম্প্রতি প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারায় তাদের জমা দেওয়া টাকা সুদসহ কেন ফেরত দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে এই ঘটনায় ভুক্তভোগীদের জীবন ক্ষতির মুখে পড়ায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এবং খামখেয়ালিপনাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে সেটিও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের ফলোআপ শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রতি তিনমাস পরপর এসব বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে না পারার ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা সাত দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সে অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস গত সোমবার (১৫ জুলাই) আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া সমস্ত অর্থ ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কর্মী প্রেরণে ব্যর্থতা ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগগুলোর আইনানুগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ভবিষ্যতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাহিদাপত্র ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে: মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা দরকার। যাতে চাহিদাপত্র ইস্যু থেকে কর্মীর বিদেশ গমন ও পরবর্তী পরিস্থিতি তদারকি করা যায়।
এই সিস্টেমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এবং রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ সংযুক্ত থাকতে পারে।মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগানুমতি গ্রহণের পর বিএমইটি'র ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ এবং কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নির্দিষ্টকরণ করা।
রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে অভিবাসন ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং ই-ভিসা প্রাপ্ত যে সকল কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, তাদের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সে দেশের সরকারের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা।
এর আগে গত ২৭ জুন মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে ৩০ হাজারেরও বেশি যুবকের কাছ থেকে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ এ রিট করেন। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট কয়েক হাজার কর্মী মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লুটের অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান আদালত।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়কে আগামী সাত দিনের মধ্যে আদালতকে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়।