সবজি, ব্রয়লার, ডিমের দাম কমলেও এখনও স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা
রাজধানীর বাজারে শাক-সবজি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করলেও ভোক্তারা বলছেন, এটা এখনো স্বস্তির পর্যায়ে আসেনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ ভালো হচ্ছে।
বাড্ডার সবজি বিক্রেতা শফিকুল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) টিবিএসকে বলেন, "আন্দোলনের মধ্যে পাইকারি বাজারে গিয়ে পণ্য কেনাটাই সংকট হয়ে পড়েছিল, তখন ঢাকায় সবজিও এসেছে কম। এখন এটা অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় দামও কমছে।"
ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, কারওয়ানবাজার, মগবাজার, সেগুনবাগিচা সহ কয়েকটি এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি কমেছে বেগুনের দাম। আন্দোলন চলাকালে প্রতি কেজি বেগুনের দাম যেখানে ১২০ টাকা হয়েছিল, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়।
এছাড়া পেপের দাম ৬০-৬৫ টাকা থেকে কমে ৪০-৫০ টাকা, ছোট পটলের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ৫০-৫৫ টাকা এবং ঝিঙা ৮০-৯০ টাকা থেকে কমে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্রতি কেজি ঢেড়স এখন ৫০-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মাঝারি সাইজের একেকটি লাউ ৮০ টাকা থেকে কমে ৫০-৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়া কাচা মরিচের দাম ৬০০ টাকা থেকে কমে ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রামপুরার সবজি বিক্রেতা মো. আনিছুর জানান, সবজির সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এখন আবার সরবরাহ অনেক বাড়ার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
নিম্ন আয়ের ক্রেতারা জানান, অতিরিক্ত দাম যেটা বেড়েছিল সেটা কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনো যে দাম সেটা তাদের কাছে বেশ চড়া।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাসির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমি ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় দোকান নিয়ে বের হওয়ার পরিস্থিতি ছিল না, আয়ও বন্ধ। ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে সবজি কেনাটাও এখন আমার জন্য কষ্টকর।"
মুরগি, ডিমের দাম কমলেও মাছের দাম চড়া
এদিকে সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম খানিকটা কমে এসেছে। কোথাও কোথাও ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও কিছু দোকানিকে ১৮৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ডিমের দাম কোথাও কোথাও কমলেও এখনো বেশিরভাগ জায়গায় চড়া। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দামও দ্রুত কমে যাচ্ছে। এলাকাভেদে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়।
তবে মাছের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় কমেনি মাছের দাম। সরবরাহ কম থাকায় ঢাকার বিভিন্ন বাজারে রুই, পাবদা, পাঙাস, তেলাপিয়া সহ বিভিন্ন মাছ এখনো ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অস্থিতিশীলতা ও কারফিউ-এর জন্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন চট্টগ্রামের দুগ্ধ খামারিরা
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) কোটা আন্দোলনকারীদের "কমপ্লিট শাটডাউন" এবং কারফিউ-এর কারণে সৃষ্ট পরিবহণ সংকটের জন্য চট্টগ্রামের দুগ্ধ খামারিরা উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি লিটার দুধের উৎপাদন খরচ ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা হলেও তারা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার তুলাতলী গ্রামের দুগ্ধ খামারি জসিম উদ্দিন বলেন, "আমার ১৫টি গাভি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ কেজি দুধ উৎপাদিত হয়, যা সাধারণত প্রতি লিটার ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ এবং পরবর্তী কারফিউর কারণে, আমি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।"
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি দুগ্ধ খামার রয়েছে কর্ণফুলী উপজেলায়। সেখানকার খামারি এবং মিল্ক ভিটার মতো দুগ্ধ সংগ্রহকারী সংস্থার মতে, প্রতিদিন এ উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার দুধ মিল্ক ভিটার প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টে যায় এবং বাকিটা চট্টগ্রাম শহরে বিতরণ করা হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে শহরের দুগ্ধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খামারিরা স্থানীয়দের কাছে প্রতি লিটার দুধ ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।