শুরু হয়েছে পোশাক খাতের উৎপাদন, শ্রমিক অস্থিরতায় বন্ধ কিছু কারখানা
দ্বিতীয় দফা কারফিউ এবং ছাত্র আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় সব ধরণের গার্মেন্টস, টেক্সটাইল মিল এবং অ্যাক্সেসরিজ শিল্প কারখানা পুরো দমে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) কর্মকর্তারা।
তারা আরো জানান, পুরো দমে উৎপাদন শুরু হলেও আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকাগুলোর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানাগুলি খুবই শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎপাদন চালাচ্ছে।
আজ থেকে আবারও চালু হয়েছে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে মারাত্মক সহিংসতার মধ্যে তিনদিন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে কলকারখানা। গতকাল বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার ওয়েস্টিনে এক জরুরি বৈঠকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
কারখানা পুরো দমে শুরু হওয়া বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি কারখানা সকাল ৮টায় তাদের নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী উৎপাদন শুরু করেছে।
বিটোপি গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা (এইচআর, অ্যাডমিন ও কমপ্লায়েন্স এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) সিরাজুল ইসলাম আজাদ জানান, তাদের কুমিল্লা, আদমজী এবং ঢাকা অঞ্চলে তিনটি ইপিজেড কারখানাসহ চারটি কারখানা রয়েছে এবং কর্মীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক, একটি সাধারণ দিনের মতো।
টিবিএস-এর সাথে কথা বলতে গিয়ে স্কয়ার গ্রুপের তপন চৌধুরী এবং ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার জানান যে, তারা সকাল থেকে উৎপাদন শুরু করেছে এবং উৎপাদন মান বজায় রেখেছে।
তবে, এই পরিস্থিতি প্রতিটি এলাকায় একরকম নয়। বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জে কিছু কারখানার বাইরের অস্থিরতার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং উৎপাদন শুরু করার কিছুক্ষণ পরই তাদের কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের মতে, টঙ্গী অঞ্চলে, বোর্ড বাজার এলাকায় মণ্ডল কারখানা গুলোর একটিতে মজুরির দাবিতে অস্তিরতা দেখা দিয়েছে এবং তা টঙ্গী ও গাজীপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কারখানাগুলোকে ভাঙচুরের হাত থেকে বাচাতে কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাসকো গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং) এমডি শারাফাত হোসেন সোহেল জানান, গ্রুপটির ১১টি ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ডাইং, প্রিন্টিং এবং এমব্রয়ডারি ইউনিট রয়েছে, যেখানে প্রায় ২৩,০০০ মানুষ কর্মরত আছেন। তিনি আরো জানান, আজকের উপস্থিতি একটি সাধারণ দিনের মতোই ছিল, তবে দুই ঘণ্টার মধ্যে অন্যান্য কারখানার কর্মীরা রাস্তায় প্রতিবাদ জানানো শুরু করলে তাদেরও বন্ধ করতে হয়েছে।
হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.কে. আজাদ বলেন, আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানাগুলোতে অস্থিরতার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে যার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি সভাপতি মাহবুবুর রহমান কর্মী এবং কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকালই ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল শিল্প-কারখানা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সহযোগিতা কামনা করেন।