বিদেশ থেকে এসে সিটি মেয়র, টিকতে পারলেন না ৯ মাসও
যুক্তরাজ্য থেকে এসে গত বছর সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলীয় অনেক নেতাকে টপকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও বাগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এতে দলের মধ্যেই ক্ষোভ ছিলো। তবু বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে অনায়াসেই জয় পান আনোয়ারুজ্জামান।
তবে মেয়র পদে নয় মাসও টিকতে পারলেন না যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সোমবার (১৯ আগস্ট) সিলেটসহ দেশের ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করেছে সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগের এই প্রজ্ঞাপনে মেয়রদের অপসারণ করে তাদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ারুজ্জামান।
গত বছরের ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় আপত্তির কারণে সে নির্বাচনে অংশ নেননি সিসিকের তৎকালীন মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। সেবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা তৎপরতা চালান।
তবে সবাইকে অবাক করে দলীয় মনোনয়ন পান যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার সাথে ঘনিষ্টতার সূত্রে তিনি মনোনয়ন পান বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
তবে ওই নির্বাচনে বড় ব্যবধানেই জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ নিলেও তৎকালীন মেয়র আরিফুল হকের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অপেক্ষা তরতে হয় তাকে। অবশেষে গত বছরের নভেম্বরে তিনি মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে তারও আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকেই নগরভবনে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে বড় ধরনের বিতর্কে পড়েন আনোয়ারুজ্জামান। একপর্যায়ে বিতর্কের মুখে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স স্থগিত করতে হয়। এছাড়া দায়িত্ব পালনের স্বল্প সময়ে নগর ভবনকে দলীয়করণ ও আওয়ামী লীগে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও দলের হাইকমান্ডের আস্থাভাজন হওয়ায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়াদকালে সিলেটে ব্যাপক উন্নয়নের আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু নয় মাসের মধ্যেই দায়িত্ব হারালেন আনোয়ারুজ্জামান।
এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বক্তব্য জানা যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তার অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মেয়রদের অপসারণের পর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সোমবার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ২৫ (ক)-এর উপধারা (১) প্রয়োগ করে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১২ সিটির মেয়রের ১২ কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।
সিলেট সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পেয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী ।