ডিসি পদে রদবদল: নতুন ডিসি নিয়োগে তালিকা তৈরি করছে সরকার
একযোগে দেশের সকল জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসক পদায়নের ফিট লিস্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে।
এই সপ্তাহেই সকল জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন ডিসি নিয়োগের জন্য ফিট লিস্ট তৈরি করতে শনিবার (২৪ আগস্ট) সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) ২৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ৬০ জন কর্মকর্তার তিন ধাপে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) আরও তিন ধাপে ২৪ ব্যাচারের আরও ৬০ জন কর্মর্কতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া সব ডিসি ও ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।
ডিসি ও ইউএনও পদে কারা নিয়োগ পাবেন, সেই নিয়ম থাকলেও তাদের মেয়াদ কত দিন হবে তা বেঁধে দেওয়া নেই। ফলে সরকার চাইলেই যে কোনো সময় ডিসি ও ইউএনওদের প্রত্যাহার করতে পারে।
কয়েক দিনের মধ্যেই বেশিরভাগ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
গত 20 আগস্ট জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৫ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার করে নতুন জায়গায় পদায়ন করেছে। ওইসব জেলাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ডিসি পদে পরিবর্তন আনে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার যেসব কর্মকর্তাকে মাঠ প্রশাসনে নির্ভরযোগ্য মনে করেছিল, এখন তাদেরকে তুলে নিয়ে আসা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ডিসি পরিবর্তন এরই অংশ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ধাপে ধাপে বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হবে বলে জানা গেছে।
যদিও আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব কর্মকর্তা বর্তমানে রয়েছেন, তারা আর মাঠে থাকতে চাচ্ছেন না। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসব কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই এক তরফা নির্বাচন করা, বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম করা হয়েছে।
সরকারের সমর্থনে কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ফলে এসব কর্মকর্তারা এখন মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপালনে যেমন অস্বস্তিতে রয়েছেন, তেমনি জনসাধারণের ক্ষোভের কারণ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১৭ আগস্ট ডিসির দুর্নীতি, দলীয়করণ, ঘুষ-বাণিজ্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এরপর থেকে ওই জেলা প্রশাসক ছুটিতে আছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাষ্ট্র সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত অনেকেই পদত্যাগ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিতে থাকা ১১ সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়। বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এক সচিবকে। অবসরপ্রাপ্ত ৫ অতিরিক্ত সচিবকে জ্যেষ্ঠ সচিব করে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বদলি করা হয়েছে। উপসচিব হিসেবে ১১৭ জনকে ও যুগ্ম সচিব হিসেবে ২২০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুলিশের এসপি পদে ৩০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার (এসপি) ও তার চেয়ে উচ্চ পদের অন্তত ২৩ জন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে এসপি, থানার ওসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নতুনদের।
সরকারের এসব কার্যক্রমকে দেশের প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগের সাজানো প্রশাসন বের করে নিয়ে আসার উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সব স্তরে একধরনের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সকল সরকারি অফিসে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে এক শ্রেণির কর্মকর্তা, কর্মচারী তাদের পদোন্নতি, পদায়ন আদায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি মেটাতে অভ্যন্তরীণভাবে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।
বিএনপি সরকারের সময় ২৪তম বিসিএস ব্যাচের নিয়োগ হওয়ায় গত সরকারের সময় এই ব্যাচের অনেকেরই ভালো পদায়ন হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই ব্যাচের দুই ডজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহর করা হয়।