যৌথ অভিযানের ঘোষণায় অনেকটা শান্ত আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ'র নেতাদের বৈঠক শেষে পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান শুরুর ঘোষণা আসার পরে আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) অনেকটাই শান্তি ফিরেছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নেতাদের সাথে গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে আজ (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আজ সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় পোশাক কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত বড় কোন ঝামেলার কথা শোনা যায়নি। এছাড়া সড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কিংবা সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেনি।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে কিছু কারখানা ব্যতীত অধিকাংশ কারখানা খোলা রয়েছে এবং সেগুলোতে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চলছে। তবে আশুলিয়ার নাসা গ্রুপ, আল-মুসলিমসহ ৪টি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও কাজ না করে হৈচৈ শুরু করলে একটি কারখানার মালিকপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
পরিস্থিতি ও যৌথ অভিযান প্রসঙ্গে বেলা ১১টা নাগাদ শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম টিবিএস'কে বলেন, "আজকে সামগ্রিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা যদিও সেভাবে এখনো যৌথ অভিযান শুরু করিনি, তবে অভিযানের ঘোষণায় একটি বড় প্রভাব পড়েছে শিল্পাঞ্চলে। আমরা আমাদেরও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, অভিযানেরও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।"
বিজিএমইএ-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হিল রাকিব টিবিএসকে বলেন, গাজীপুর, সাভার, এবং আশুলিয়ার মতো প্রধান এলাকাগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ ও ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হওয়ার ফলে বেশিরভাগ কারখানা সকাল থেকে চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, "আশুলিয়ার হামিম গ্রুপ এবং শারমিন গ্রুপের মতো বড় কারখানা সুষ্ঠুভাবে চলছে। তবে নাসা গ্রুপ এবং আল-মুসলিম গ্রুপের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করলেও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।"
আবদুল্লাহ হিল রাকিব বিশমাইল এলাকার কথা উল্লেখ করে জানান, "সেখানে কিছু শ্রমিক রাস্তায় জড়ো হওয়ায় সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী সেই দিকে যাচ্ছে এবং বিজিএমইএ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং তাদের দলও পরিস্থিতি সমাধানের জন্য সেখানে যাচ্ছেন।"
প্রসঙ্গত, ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা। সকাল থেকে শ্রমিকরা আশুলিয়ার ডিইপিজেড এবং বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন কারখানার সামনে জড়ো হয়ে চাকরির দাবিতে এই বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করেন ও বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থিত অন্তত ৩০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ অভিযান পরিচালনার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বৈঠকে বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এছাড়া অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আজ থেকে সব কারখানা চালু রাখতে মালিকদের অনুরোধ জানান তিনি।