প্রজন্মের ব্যবচ্ছেদ ও বর্তমান প্রজন্মের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়
পৃথিবীতে যতবারই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন তথা বিপ্লব সূচিত হয়েছে, ততবারই তাতে উঠে এসেছে তারুণ্যের ভূমিকা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তারুণ্যের সাহসিকতাসূচক অবস্থানই সূচিত করেছিল ফরাসি বিপ্লব, ১৮৪৮-এর বোহেমিয়ান বিপ্লব থেকে চীনের তিয়েনআনমেন আন্দোলন ও ১৯৯৯-এর তেহরান আন্দোলন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ও স্বাধীনতাপূর্ব সময়েও আমরা দেখেছি সকল রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফলে প্রথমসারিতে অবদান রেখেছে ছাত্রসমাজ তথা তারুণ্যের দুর্বিনীত শক্তি। তরুণ প্রজন্ম যে অসাধ্য সাধন করতে পারে, সেটা বাংলাদেশ আবারও প্রত্যক্ষ করেছে সাম্প্রতিক সময়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে উপেক্ষা করার আর সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রজন্ম বিভক্তিগুলোকে সূচিত করতে জেনারেশন জেড, মিলেনিয়ামস ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার হচ্ছে। প্রজন্মের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বোঝার আগে এ শব্দগুলোর ব্যবচ্ছেদ জরুরি। প্রজন্ম একটি সামাজিক ধারণা, যা নির্দিষ্ট সময়কালে জন্ম নেওয়া মানুষের একটি গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা সাধারণভাবে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বড় হয়ে ওঠে। প্রজন্মের নামকরণ এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার মাধ্যমে আমরা একটি সমাজের পরিবর্তন, অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের প্রবণতা বুঝতে পারি।
প্রজন্মের শ্রেণিবিভাগ সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের অভিজ্ঞতা ও পরিবর্তনশীলতা প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পারি কীভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
১৯০১ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে যারা জন্মেছিলেন তাদের গ্রেটেস্ট জেনারেশন বা জি. আই. জেনারেশন নামে অভিহিত করা হয়। বৃহত্তর মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে পরিচিত এ প্রজন্ম সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয়ে শিখেছিল কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়তা।
নীরব প্রজন্ম বা সাইলেন্ট জেনারেশন নামে পরিচিত প্রজন্ম ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে জন্ম যাদের। তাদের শৈশব ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের জীবনসঙ্গতি তাদের কর্মদক্ষতা ও পরিবারকে সমর্থন দেওয়ার প্রবণতা দ্বারা চিহ্নিত। ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের বেবি বুমার জেনারেশন বলা হয়েছে। বুম নামটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ করে। এই প্রজন্মের সদস্যরা সামাজিক পরিবর্তন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বড় হয়েছেন। তারা প্রগতিশীলতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ভোগবাদিতাসহ একটি উদ্দীপক জাতীয় মনোভাবের জন্য পরিচিত।
পরের জেনারেশনকে 'এক্স-জেনারেশন' বা 'বেবি বাস্টারস' নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। প্রযুক্তিগত ও সামাজিক পরিবর্তনের সময় বড় হওয়া এই প্রজন্মের জন্মহার বেবি বুমারদের চেয়ে কম ছিলো। ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া এই প্রজন্মের সদস্যরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সন্দেহপূর্ণ ও স্বনির্ভরতার প্রতি আগ্রহী ছিলো; একই সঙ্গে তারা হয়েছে নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সাক্ষী।
মিলেনিয়ালস বা ওয়াই জেনারেশনের শৈশব ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্মোচনের সময়ে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের জন্মানোর কারণে তারা গ্রেট রিসেশন ও ৯/১১ আক্রমণ-পরবর্তী বিশ্ব-রাজনীতির টালমাটাল সময় অনুভব করেছেন। এ প্রজন্মের সদস্যরা প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং সামাজিক ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর পরের নবসূচিত প্রজন্মকে জেনারেশন জেড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এরা ডিজিটাল যুগের প্রথম প্রজন্ম যারা শিশুকাল থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমগুলো দ্বারা প্রভাবিত। এ প্রজন্মের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তি রয়েছে এবং তারা এ প্রযুক্তির সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মানো এ প্রজন্মের সদস্যারা ডিজিটাল নেটিভ হিসেবে পরিচিত। তারা এমন একটি পরিবেশে বড় হয়েছে যেখানে তথ্যের প্রবাহ সর্বদা অবিরাম এবং প্রযুক্তি একটি অভ্যস্ত অংশ।
২০১০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা সামাজিক ও ডেমোগ্রাফিক শ্রেণিবিভাজনের অংশ হিসেবে ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য ও প্রবণতা নিয়ে বিশ্লেষণ ও গবেষণা শুরু করেন। মিডিয়া সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন পিউ রিসার্চ সেন্টার, নিলসেন এবং অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান প্রজন্ম জেড সম্পর্কে গবেষণা করে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক আচরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। যাতে ধারণা করা হয়েছে, দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ, জন্ম থেকেই ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে পরিচিত তাদের যোগাযোগের পদ্ধতি, সামাজিক আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই প্রজন্ম সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট, ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের অনুভূতি এবং মতামত প্রকাশ করে।
প্রজন্ম জেডের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো তাদের সামাজিক সচেতনতা এবং অন্তর্ভুক্তি। এই প্রজন্ম জাতিগত, সাংস্কৃতিক এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং এই বৈচিত্র্যের প্রতি একটি ইতিবাচক মনোভাব রাখে। তারা সমাজের বিভিন্ন অংশের সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলো বোঝে এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করে।
এছাড়া, প্রজন্ম জেড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশবান্ধব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সচেতন। তারা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন ও তাদের জীবনযাত্রার মধ্যে এই বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটে। তারা পরিবেশবান্ধব পণ্যের প্রতি আগ্রহী এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্দোলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে। এই প্রজন্মের সদস্যরা প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন ধরনের চাকরি, শিক্ষা এবং বিনোদনের সুযোগগুলো গ্রহণ করেছে। তারা অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে সহজেই জ্ঞান অর্জন করে এবং ডিজিটাল কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করে। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং, গিগ ইকোনমি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এই প্রজন্মের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে উদিত হয়েছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রজন্ম জেড বিভিন্ন পদ্ধতি এবং নতুন ধরনের সুযোগের প্রতি আগ্রহী। তারা অনলাইন কোর্স, ভার্চুয়াল লার্নিং এবং ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে। এই প্রজন্মের সদস্যরা প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতির বাইরেও নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি অনুসন্ধান করে এবং তাদের পছন্দের ক্ষেত্রের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে চেষ্টা করে।
রাজনৈতিক সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
প্রজন্ম জেড সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। তারা বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত সমস্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে এবং পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে। এই প্রজন্ম সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে সংগঠন এবং প্রচারণার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য প্রচারণা চালায়।
তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। প্রজন্ম জেড রাজনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি গভীর আগ্রহ এবং সচেতনতা রাখে। তারা নির্বাচন এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং তাদের মতামত প্রকাশের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। তাদের দ্বারা প্রভাবিত নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং সামাজিক আন্দোলন ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে।
সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা যুব নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে যেখানে ঐতিহ্যগত পন্থাগুলো উন্নয়নের জন্য অন্তরায় এবং ধীরগতির, সেখানে তরুণ প্রজন্মের দ্বারা নতুন ধারণা গতিশীলতা প্রদান করে। প্রযুক্তি, ব্যবসা বা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তরুণ নেতারা সবসময়ই স্মার্ট সমাধানগুলো গ্রহণ করে।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় করণীয়
তরুণ নেতারা সামাজিক সংগঠন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য নতুন পদ্ধতির পথপ্রদর্শক। তরুণদের গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা, বাংলাদেশের অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, শিক্ষার উন্নতি এবং সেবামূলক খাতের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নৈতিকতার সর্বোচ্চ প্রাধান্য
বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো দুর্নীতি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ করে, বৈষম্য বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে। তরুণ প্রজন্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দুর্নীতি দমনে একটি শক্তিশালী শক্তি হতে পারে। তরুণ নেতারা প্রায়শই বেশি আদর্শবাদী এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত, ফলে তাদের সততা এবং নৈতিকতা রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিক ভূমিকা রাখে। ক্ষমতা ও অর্থ-বিত্তের লোভ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পদবি পাওয়ার আশা তরুণ প্রজন্মকে তাদের মূলধারার চিন্তা চেতনা এবং দেশ গঠনের সুস্থ নেতৃত্ব থেকে যেন দূরে নিয়ে না যায় সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তরুণ নেতাদের উচিত হবে সততা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার গুরুত্ব দেখানো। তাদের উচিত সক্রিয়ভাবে দুর্নীতিবাজদের নিরুৎসাহিত করা এবং নৈতিক শাসনের সংস্কৃতির প্রচার করা। জ্যেষ্ঠ নেতাদের জোর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, রাজনীতি জনগণের সেবা করা, ব্যক্তিগত লাভ নয়। এক্ষেত্রে ভোটারদের কল্যাণ এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করার কোনো বিকল্প নেই।
স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ ও অনিয়ম হ্রাসে পদক্ষেপ নেয়া
তরুণদের সব রকমের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বে কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশকিছু বাধা রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা প্রায়ই পুরোনো প্রজন্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়, যারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক। একবার ক্ষমতায় এলে আর ছাড়তে চায় না। এই প্রজন্মগত ব্যবধান তরুণদের নেতৃত্বে আসার অন্তরায়।
নেতিবাচক পৃষ্ঠপোষকতা এবং রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি ও ক্ষমতার লোভ তরুণ যোগ্য নেতৃত্বের উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করে। এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাগুলোতে যুব কোটা প্রবর্তন এবং তরুণ নেতাদের সংযুক্ত করে এমন পরামর্শদান কর্মসূচির প্রতিষ্ঠা করা উচিত যা তরুণদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে এবং দেশ গড়ার সমন্বিত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে।
প্রজন্ম ব্যবধান কমানো
রাজনীতির ক্ষেত্রে, পুরোনো রাজনৈতিক নেতাদের অভিজ্ঞতা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ বোঝার জন্য প্রবীণ নেতা ও নীতিনির্ধারকদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের সরকারি কার্যক্রমের জটিলতা, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক নীতি মেনে চলার গুরুত্ব বোঝার জন্য প্রবীণ নেতারা তরুণদের গাইড করতে পারেন। তরুণ নেতাদের জন্য স্থান তৈরি করা ও সিনিয়র নেতাদের ক্রমান্বয়ে উদীয়মান নেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত। এরমধ্যে দলীয় কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্বের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তরুণ নেতাদের দ্বারা প্রস্তাবিত উদ্যোগ এবং নীতিগুলো উৎসাহিত করা এবং সমর্থন করা তাদের ধারণাগুলো বাস্তবায়নের ওপর মূল্যায়ন করার মাধ্যমে তাদের জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সংলাপ, সমঝোতা এবং বোঝাপড়ার প্রচার জড়িত। তরুণ নেতারা পুরোনো এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। অতীতের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা যাতে হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন ধারণাগত পদ্ধতির সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। এই ভারসাম্য উদ্ভাবনী এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নীতি তৈরির জন্য অপরিহার্য।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচার ও রাজনৈতিক শিক্ষায় উৎসাহিত করা
তরুণ রাজনীতিবিদদের জননীতি, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে ক্রমাগত শেখার ও পেশাগত উন্নয়ন, বৈশ্বিক প্রবণতা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনী শাসন মডেল সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান রাখতে উৎসাহিত হতে হবে। তরুণ নেতারা সহনশীলতা, বহুত্ববাদ এবং বিভিন্ন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধার মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গ্রহণ করতে উৎসাহী থাকবেন। সামাজিক সম্প্রীতি এবং কার্যকর গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্য তরুণ নেতাদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনায় যুক্ত হতে হবে এবং সহিংসতা ও চরমপন্থা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিতে হবে।
একীভূতকরণে আগ্রহ দেখানো
তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই সব সেক্টরে নেতৃত্বের ভূমিকায় তরুণদের একীভূত করার জন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তরুণদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার জন্য সুযোগ করতে হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বের সুযোগ এবং স্থান দেওয়া ভবিষ্যতের জন্য শুধু একটি বিনিয়োগ নয়- এটি জাতির অব্যাহত অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। একটি আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে দেশকে চালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে। তরুণ নেতাদের ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় নেতৃত্বে তাদের একীভূত করার মাধ্যমে, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে, যাতে আগামী বছরগুলোতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে। অন্যদিকে, ক্ষমতা ও অর্থ-বিত্তের লোভ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পদ-পদবি পাওয়ার আশা; তরুণ প্রজন্মকে তাদের মূলধারার চিন্তা চেতনা এবং দেশ গঠনের সুস্থ নেতৃত্ব হতে যেন দূরে নিয়ে না যায় সে দিকেও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।