শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল গাজীপুর: বিগবস কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে, ৩০ কারখানায় ছুটি
বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের পোশাক শিল্প আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিনভর গাজীপুরের জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলনে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন ভবানীপুর এলাকায় অবস্থিত বিগবস করপোরেশন লিমিটেড নামক একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
শ্রমিক আন্দোলনের কারণে আজ গাজীপুরের ৬টি কারখানা বন্ধ এবং ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারাবো এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা কালিয়াকৈরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নেন।
এতে সড়কের উভয় দিকে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হলে সাধারণ যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শ্রমিকরা আশপাশের কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেন এবং কিছু কারখানায় ভাঙচুর চালান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিগবস কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করেন একদল উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক। কারখানাটিতে মূল্যবান ফ্যাব্রিক্স এবং গাড়ি রাখা ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাদের একটি গাড়িও ভাঙচুর করেন। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, 'বিগবস নামক একটি কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা চলে আসেন।'
পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় কোনাবাড়ি ও ডিবিএল ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সন্ধ্যায় পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে, প্রচুর ধোঁয়া থাকায় ডাম্পিং হতে সারারাত লাগতে পারেন বলে জানিয়েছে দমকল বাহিনী। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।
বিগবস করপোরেশন লিমিটেড কারখানার স্টোরকিপার ওয়াহেদ খান বলেন, 'বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকেরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বিগবস কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালান। পরে তারা কারখানার ওয়্যারহাউজে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে মূল্যবান ফ্যাব্রিক্স ছিল।'
জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভেতরে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা রয়েছে। এগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এসব কারখানায় ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করে। যাদের বেতনের পরিমাণ প্রতিমাসে ৮২ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গত আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি।
গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা আগষ্ট মাসের বেতন দাবি করে আসছে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেতন দেওয়ার কথা জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সারাদিনে কিছু শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হলেও বেশিরভাগ শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে বেতন যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছুটি ও কারখানা বন্ধ ঘোষণা
শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে বুধবার গাজীপুরে ৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে এদিন টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় অবস্থিত যমুনা অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভে নামেন। এ সময় বহিরাগতদের মারধরে চারজন শ্রমিক আহত হন। পরে ওই কারখানাসহ আশপাশের পাঁচটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড এবং শ্রীপুরের যমুনা ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
শিল্প পুলিশের পদক্ষেপ
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে গাজীপুরে ৬টি কারখানা বন্ধ এবং ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
'আমরা মালিক, শ্রমিক এবং অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি,' বলেন তিনি।